• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

আবাসনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলেও কর হতে পারে ৫ গুণ

প্রকাশ:  ২৭ মে ২০২৫, ১২:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আগামী বাজেটে আবাসন খাতে বিদ্যমান কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার জন্য বড় আকারের কর গুণতে হতে পারে, যার পরিমাণ হতে পারে বর্তমানের চেয়ে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি। আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা আগামী জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। সেখানে তিনি এই কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবেন বলে জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। এ পদক্ষেপের লক্ষ্য রিয়েল এস্টেটে কালো টাকার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা এবং করের হারকে বাজারমূল্যের কাছাকাছি আনা। এ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে টাকা সাদা করা হলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে যেকোনো সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগও থাকবে।  এছাড়া অপ্রদর্শিত সম্পদ ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের হাতে ধরা পড়লে স্বাভাবিক করের বাইরে জরিমানা বিদ্যমান হারের চেয়ে বাড়তে পারে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ যেসব এলাকায় জমির দলিলমূল্যের চেয়ে প্রকৃত লেনদেন মূল্য অনেক বেশি, সেখানে এই হার পাঁচগুণ এবং যেসব এলাকায় এই ব্যবধান কম, সেখানে তিনগুণ কর বাড়ানো হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বেশ কিছু সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এই সুযোগ রাখা হলেও তাতে এমন বিধিনিষেধ আসবে যে, তাতে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা উৎসাহ হারাবেন।' তিনি আরও বলেন, আসন্ন এবারের বাজেটে প্রতি বর্গমিটারের পরিবর্তে প্রতি বর্গফুট হিসাবে কর হিসাব করার বিধান আসতে পারে।

তবে সরকারের এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, এটি করা হলে ইতিমধ্যে ধুঁকতে থাকা রিয়েল এস্টেট খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। বর্তমানে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে ২০০ বর্গমিটারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়মূল্য যা-ই হোক, প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৬ হাজার টাকা নির্ধারিত কর দিতে হয়। আর ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য কর ৪ হাজার টাকা।

 মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় অপ্রদর্শিত অর্থের ক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের কর বর্গমিটারপ্রতি ৩ হাজার টাকা ও বড় ফ্ল্যাটের কর প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এসব এলাকার কর পাঁচগুণ বাড়তে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা।

এর বাইরে অন্যান্য এলাকার কর বর্তমানে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা; এগুলোর কর বাড়তে পারে তিনগুণ। ধরা যাক, গুলশান এলাকায় কেউ ২০০ বর্গমিটার আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন কালো টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে। তাহলে বর্তমান হিসাবে কর আসবে ৮ লাখ টাকা। পাঁচগুণ বাড়ানো হলে কর দিতে হবে ৪০ লাখ টাকা। এর কারণ ব্যাখ্যা করে এনবিআরের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা হিসাব করে দেখেছি, বর্তমান ব্যবস্থায় দলিলমূ্ল্য বিবেচনায় গুলশানের মতো এলাকায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে কর হয় মাত্র ৮ শতাংশ। আর যদি বাজারমূল্য হিসাব করা হয়, তাহলে আলোচ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত করহার আরও অনেক কম। অথচ একজন নিয়মিত করদাতা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেন।'

গত বাজেটের পর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক হিসাবে জানায়, এলাকাভিত্তিক আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগে যে কর ধরা হয়, তাতে গড় কার্যকর করহার (ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেট) হয় মাত্র ২.৩৮ শতাংশ। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'বর্তমানের তুলনায় যদি কর পাঁচগুণ বাড়েও, তা-ও বাজারমূল্য বিবেচনায় ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেট ১০ শতাংশের কাছে থাকবে, যা অনেক কম। ফলে যারা টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে সাদা করবেন, তারা নিয়মিত করদাতাদের চেয়ে বেশি সুবিধাই পাবেন।'

'যদিও কর বাড়ানো ভালো উদ্যোগ, তবে এই সুবিধা থাকাই উচিত নয়,' বলেন তিনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার অ্যাপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন খাতে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়। এর ফলে ওই বছর ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি কালো টাকা সাদা হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বেশিরভাগই হয়েছে আবাসন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাসন খাতে কী পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এনবিআর বা রিহ্যাবের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

 

সর্বাধিক পঠিত