• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনায় সবুজে ছেয়ে গেছে ঢাকা

প্রকাশ:  ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সবুজে বদলে গেছে মেগা সিটি ঢাকা। দূষণ নেই। নেই কর্কশ শব্দ। কোথাও দেখা যাবে না ধুলাবালি। এখন সবুজ প্রকৃতি মহানগরী ঢাকার চারদিকে শোভা পাচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কের দুই পাশের গাছ-গাছালিতে সবুজ কচি পাতা চোখ মেলেছে। চুলের মতো তির তির করে উড়ছে বাতাসে সেসব কচি পাতা। কোথাও কোথাও কুঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে ফুল। এসব ফুল কত রঙিন দেখতে! কোনোটি লাল, কোনোটি হলুদ আবার কোনোটি বেগুনি। অন্যরকম এক আবেশ ছড়াচ্ছে বর্তমান রাজধানীর প্রকৃতি। শ্যামলীর বাসিন্দা মোজাম্মেল হায়দার বললেন, কী সবুজ ঢাকার বর্তমান পরিবেশ! ভাবাই যায় না! কী সুন্দর সবুজ হয়ে আছে নতুন পাতায় ও ফুলে গাছ-গাছালি! রং-বেরঙের প্রজাপতিও উড়ছে!

করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশ। সাধারণ ছুটির নোটিস ঝুলছে অফিস-আদালত এবং শিল্প-কারখানায়। বন্ধ অফিস-আদালতপাড়া। বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গণপরিবহনের চাকাও ঘুরছে না। ঝাপ উঠছে না দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। সীমিত আকারে খোলা থাকছে ব্যাংকসহ সেবা সংক্রান্ত দফতর, হোটেল ও ওষুধের দোকান। মুদি ও শপিং মলগুলো সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকছে। সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে ঘর থেকে সাধারণ জনগণকে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। সরকারি ঘোষণা কঠোরভাবে বাস্তবায়নে চলছে প্রশাসনের পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তায় সেনা সদস্যদের টহল। অমান্যকারীদের মোটিভেশনের পাশাপাশি মুখোমুখি হতে হচ্ছে লঘু শাস্তি-জরিমানার। ফলে মানুষ কার্যত ঘরবন্দী। গত ২৬ মার্চ শুরু হওয়া এ পরিস্থিতি নতুন কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আপাতত চলবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। টানা এক মাসের ছুটিতে থাকছে গোটা দেশ। গণপরিবহন আর জনশূন্য ঢাকা এখন আর দূষণের নগরী নয়। নেই গাড়ির কালো ধোঁয়া। বাতাসে নেই ভারী সিসা। মেট্র্রো রেলের উন্নয়ন কাজ বন্ধ। ধুলাও নেই বলে উড়ছে না। ফুরফুরে বাতাসে তরতর করে বেড়ে উঠছে সড়কদ্বীপের গাছ-গাছালি। পথ বিভাজনে সংসারপাতা ফুলগুলো। সারা বছরের ধূসরতা কেটে গেছে কয়েক দিনেই। আপন রূপে ফিরছে শোভা বৃদ্ধির জন্য লাগানো লতাগুল্ম। এ ছাড়া রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছ-গাছালি এখন সবুজে ভরে গেছে। ঢাকার পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত মানুষের ছুটি হয়নি। তাদের একজন মোমেনা খাতুন। তার ভাষায়, ‘সড়কে এখন বের হলে দম নিয়েও শান্তি পাই। ধুলাবালি একেবারে নাই। পেট্রল পোড়া গন্ধ নাই। বুক ভরে বাতাস নিতে পারছি।’ খোকন সর্দারও কাজ করছেন উত্তর সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে। সড়কদ্বীপ আর বিভাজনের গাছগুলো দেখভাল করেন। পানি দেন। ছেঁটে সুন্দর রাখেন। বললেন, এখন গাছগুলো দেখলে মন ভরে যায়। কী সুন্দর সবুজ গাছ-গাছালি! অন্য সময় এতটা সবুজ দেখা যায় না। ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ, বিজয় সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কে দেখা গেছে পথের দুই পাশে লাগানো গাছগুলোতে নতুন সবুজ পাতায় রোদ পড়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। পথবিভাজনের ফুলগাছ, লতাগুল্মগুলোও সতেজ হয়ে উঠেছে। কোথাও কোনো কোলাহল নেই। এসব স্থানের বাতাসে নেই ধুলার ঝড়। এই ফাঁকা ঢাকায়ও দু-একটি ছোট ট্রাক ও পিকআপ চলছে। সিএনজি অটোরিকশাও দেখা গেল দু-একটি। কোনোটায় যাত্রী আছে, কোনোটা খালি। অটোরিকশা চালক সানোয়ার হোসেন বললেন, সড়ক ফাঁকা পাইলে তো ভালো লাগে। কিন্তু এরকম ফাঁকা তো ভালো না। যাত্রী নাই। খাবার হোটেলের খোঁজে বের হয়েছেন কালশীর বাসিন্দা আবদুস সালাম। হাতে সার্জিক্যাল গ্লাভস আর মুখে মাস্ক। বললেন, ঢাকা শহরে এসেছি ১২ বছর হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা হয়। তাও অনেক মানুষ থাকে। ঘুরতে বের হয়। গাড়ি চলে। এমন সুনসান দেখিনি কখনো। তবে যানহীন ঢাকায় খোলা নিঃশ্বাস নিতে ভালো লাগছে তার। কোথাও কোনো দূষণ নেই। তিনি বলেন, আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে দূষণ বন্ধ করতে পারি তাহলে ঢাকাকে অনেকটা সুন্দর রাখতে পারব। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বাধিক পঠিত