রাজরাজেশ্বরে হত্যা মামলায় আটক হয়নি কেউ
নিহত লোকমান গাজীর পরিবারের দাবি, ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে ডাকাতির অভিযোগ
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে লোকমান গাজী (৬০) হত্যার ঘটনায় অসামীদের কেউ এখনো আটক হয়নি। এই সুযোগে হত্যা মামলায় অভিযুক্তরা উল্টো ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা সাজানোর অভিযোগ তুলেছে বলে দাবি করছেন নিহত লোকমান গাজীর পরিবার।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একটি বিবাহ বিচ্ছেদ আর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত ২৮ মে বিকেল ৪টায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শিলারচর ও লক্ষ্মীর চরের গাজী এবং মাঝি বংশের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাঝিদের পক্ষ নিয়ে একই গ্রামের বকাউল বংশের লোকজন গাজী পরিবারের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তিনটি বংশের মাঝে হামলা-পাল্টা হামলায় গাজী বংশের প্রায় ১০জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। তাদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত লোকমান গাজী (৬০) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৯ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় লোকমান গাজীর পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-৮, তাং ৩/০৬/২০২০। এই মৃত্যুর খবর শুনেই ১নং ওয়ার্ড মেম্বারসহ অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেন।
নিহত লোকমান গাজীর পরিবার জানায়, মূলত এই হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দিতে এবং প্রশাসনের নজর ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে প্রতিপক্ষরা নিজেদের গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে ডাকাতি ও লুটপাটের সাজানো মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত আসামীদের আটক এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করছি।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ গাজী রনি জানান, আমি ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার। আর মারামারির ঘটনা ঘটেছে ১নং ওয়ার্ডে। আমার অপরাধ হলো আমি গাজী বংশের লোক। তাই আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজরাজেশ্বরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্যে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসিম উদ্দিন ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারীর নির্দেশে আমি গ্রাম পুলিশ এবং গ্রামবাসীর সমন্বয়ে রাতভর পাহারার ব্যবস্থা করেছি।
এদিকে স্থানীয় জসীম গাজীর দাবি, ডাকাতের ভয়ে তার ৬টি গরু অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন। আঃ আজিজ খান নামের আরেকজন তার একটি গরু কুলসুমা বেগমের কাছে লালন পালনের জন্যে দিয়েছেন। সেই গরুটি তিনি ফেরতও নিয়ে গেছেন। এখানে আমাদের গরু-ছাগল লুট হয়নি।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের এই ইউনিয়নটি শান্তিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রতিটি পরিবারই একে অন্যের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি নিজে বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদের কথা শুনছে না। যার কারণে ইতিমধ্যে এক পক্ষের একজনের মৃত্যু এবং অপর পক্ষের একজন মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। আমিও চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ন্যায় বিচার পাক। এই বিবাদ ও রক্তপাত বন্ধ হোক।
উল্লেখ্য, পারিবারিক কলহের কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে এবং সামাজিকভাবেই দুলাল মাঝি ও তার স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। অথচ এরপরেও দুলাল মাঝি নিজের ফেসবুকে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল মন্তব্য করে পোস্ট দেন। এই পোস্টকে কেন্দ্র করেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধ থেকে ২৮ মের সংঘর্ষে আহত লোকমান গাজী (৬০) ঢাকার হাসপাতালে ৯দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর অপর পক্ষের একজন গুরুতর জখম নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। উল্লেখিত ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলাও হয়েছে।
এ দিকে একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজরাজেশ্বরে দুই বংশের বিরোধের সহিংস ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলার চিরার চর ও মতলবের বোরো চর থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের অন্ধকারে রাজরাজেশ্বর চরে ঢুকেছিল।