• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি যেনো এক একটি সবজি বাগান

প্রকাশ:  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের বিস্তৃীর্ণ চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি যেনো এক একটি সবজি বাগান। বছরের যে কোনো সময়ের চাইতে শীত মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হয়। চরাঞ্চলের মানুষে নিয়মিত এসব সবজি চাষ করে নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারেও বিক্রি করে। নদীর ভাঙা গড়ার খেলায় এক চর থেকে অন্য চরে বসতি স্থাপন করে এসব  চরাঞ্চলের মানুষজন। নতুন চরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন যেখানে তাদের বাড়ি হয়। আর সেখানেই গড়ে তুলেন সবজির বাগান। একই সাথে গবাদি পশু ও অন্যান কৃষি উৎপাদন করেন। বর্তমানে চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি দিয়ে শহর অঞ্চলের সবজির একটি অংশ চাহিদা মিটে। চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমে চরগুলোর প্রতিটি বাড়ি দেখে মেন হয় যেন সবজির বাগান। তারা বাড়ির সামনের জমিও ও ঘরের অঙ্গিনায় এসব সবজি চাষ করে থাকে।

সম্প্রতি সময়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া, শিলার চর, চিরারচর, বাঁশগাড়ি চরে গিয়ে দেখা গেছে পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার চরাঞ্চলের লোকদের নতুন নতুন বাড়ী তৈরী হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ বাড়ীর চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। কিন্তু শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে সরিষা, মাশকালাই, করলা শশা, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই এসব উৎপাদনে । প্রতিটি বাড়ি নারীদের হাতের ছোঁয়ায় পরিণত হয় এক একটি সবজি বাগানে ।

এ বিষয়ে প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে কথা হয় আসমত আলী প্রধানীয়ার সাথে। তিনি, বার বার নদী ভাঙ্গনের ফলে নতুন চর জেগে উঠে আর নতুন চরে পলি সমৃদ্ধ মাটিতে এসব সবজির ফলন খুব ভালো হয়। কারণ পলি সমৃদ্ধ এসব মাটিতে তেমন কোনো সারের প্রয়োজন হয় না। তিনি আরো বলেন এ চর বার বার ভেঙ্গেছে আবার জেগে উঠছে।  গত কবছর আগে এখানে বাড়ি তৈরী করা করেছি। বাড়িতে শিম, কুমড়া, লাউ, পেঁপে, বেগুন, টমটো গাছ আছে। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বাজারেও বিক্রি করি। এখানকার প্রায় সবগুলো বাড়িতেই এ ধরণের সবজির বাগান আছে।

শিলার চর এলাকার জাহানারা বেগম বলেন, আমাদের বাড়িতে সবজির বাগান করতে বাজার থেকে সার কিনতে হয় না। আমাদের পালিত গবাদি পশুর জৈব সার দিয়ে সবজির বাগান হয়। অনেক সময় গোয়াল ঘর ও বসত ঘরের উপরেই শিম, কুমড়া ও লাউ গাছ লাগানো হয়। কারণ আমরা চরাঞ্চলে স্থায়ী না হওয়ার কারণে বাড়ীতে বড় ধরণের কোন স্থায়ী গাছ নেই।

শীতকালে দেখা যায় চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ট্রলারে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর শহরে নিয়ে আসে । শহরের চরাঞ্চলের সবজির চাহিদা বেশী। প্রতি কেজি শিম পাইকারী বিক্রি হয় ২০-২৫ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৪০-৫০ টাকা। কুমড়া গড়ে প্রতি পিচ ৪০-৫০ টাকা। এছাড়াও অনেকে কুমড়া, মাশকালাই শাক বিক্রি করেন। শীত মৌসুমে নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। সবজির বিক্রির টাকা কিছুটা হলে আমাদের চরাঞ্চলের লোকদের আয় রোজগার বাড়ে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী বলেন, আমি দীর্ঘদিন চরাঞ্চলে বসবাস করছি। এ এলাকার জনগণ কৃষি ও জেলে নির্ভর।  এখানকার মানুষ খুবই কর্মঠ। বছর জুড়ে কোন কোন কাজে জড়িত থাকেন। তবে এখানকার প্রতিটি বাড়ীতে প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হয়। জৈব সার ব্যবহার করায় বিষমুক্ত সবজির চাহিদা শহরে অনেক বেশী। চরাঞ্চল নদীর কারণে বিছিন্ন হওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা কৃষি কাজে তেমন কোন প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ হয় না। তারপরেও পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি তারাও কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাড়িতে সবজি এবং জমিতে একাধিক উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

সর্বাধিক পঠিত