• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

রাঙ্গুনিয়ার নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে পরিবেশ উপদেষ্টার প্রতিনিধি দল

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৬
এম. মতিন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদী থেকে  অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। কোনভাবেই কর্ণফুলী নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এতে বাড়ছে নদী ভাঙন। ফলে নদীতে বিলীন যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এজন্য প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে দুষছেন স্থানীয়রা।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্ণফুলী নদী পাড়ের ভাঙন পরিদর্শন করেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) একটি প্রতিনিধি দল।

এসময় বেলার প্রতিনিধি দল উপজেলায় সরফভাটার দূর্গম পাইট্টেলিকুল, গোডাউন, মরিয়ম নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ ইছামতী চর, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মধ্যম কদমতলি হিন্দু পাড়াসহ কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত স্পট পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করেন এবং নদী ভাঙনের শিকার মানুষদের সাথে কথা বলেন।

স্থানীয়রা জানান, টানা ১৬ বছর কর্ণফুলী নদী, শিলক খাল, ইছামতী নদীর বালু মহাল গুলো নিয়ন্ত্রণে ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদের কব্জায়। এরশাদ মাহমুদের শ্যালক ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারার কথা বলে বালু উত্তোলন করতো আওয়ামী লীগের লোকজন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন কার্যক্রম। পালিয়ে যাওয়া আ. লীগের নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখন বালু তুলছেন বিএনপির প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা আরও জানান, পূর্বে ৮ -১০টি বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করলেও এখন অর্ধশতাধিক স্থান থেকে রাত দিন প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করছেন চক্রটি। প্রতিদিন একেকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার পর্যন্ত বালু বিক্রি হয়, সবমিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে সাধারণ পথচারীদের চলাচলের রাস্তা অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বালুভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচলে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নাকে মুখে ধুলা ঢুকে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। অসহ্য ধুলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এসব বালুভর্তি ট্রাক চলাচলে বাধা দিতে গেলে অস্ত্রসহ বিভিন্ন হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের এ নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই। তাই বালুভর্তি ট্রাক চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন- ২০১০ এ সেতু থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সরফভাটার গোডাউন সেতুর ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলা সাথে তিন ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সড়ক গোডাউন সেতু। সেতুর খুব কাছে ড্রেজার বসিয়ে ৪০ ফুট গভীর করে বালু তোলার কারণে সেতুর পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও করছে এলাকাবাসী। তবে ইজারা বহির্ভূত এসব বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে প্রশাসনের নাকের ডগায় গোডাউন সেতুর পাশ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি স্থানীয়রা।

এবিষয়ে পরিদর্শনে আসা বেলার চট্টগ্রাম নির্বাহী পরিচালক মুনিরা বেগম বলেন, কর্ণফুলী নদী দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। অবৈধ বালু উত্তোলনের নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছে এই কর্ণফুলী নদী।  রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যথেচ্ছভাবে বালু তুলছেন। এতে নদীর পাড় ভাঙন থেকে শুরু করে পানির গতিপথ বদলে যাওয়া ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য ইজারাকৃত স্পট গুলোর বাইরেও উপজেলার ৩টি নদীর অর্ধশতাধিক স্পট থেকে ইজারাবহির্ভূতভাবে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করছেন। আবার তাঁরা ইজারা নিচ্ছেন এক জায়গার আর বালু তুলছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। ফলে নদী ও বসতি এলাকা, সবখানে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আবার খোলা ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে বায়ুদূষণসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশ দূষণ করছে। এসব বিষয় গুলো আমরা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাবো।

সর্বাধিক পঠিত