করোনা আমাদের এক মানবিক পুলিশ চিনিয়ে দিল।
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ১০:১৭ | আপডেট : ১৯ মে ২০২০, ১০:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে কোন মাক্স ছাড়া , হ্যান্ড গ্লাবস ছাড়া নিজের সুরক্ষা ছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগের শেষ ছিল না। কিন্তু করোনাকালে এ কোন পুলিশকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। পুলিশ সদস্যরা আপনার আমার সন্তান, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধব। পুলিশ সদস্যদের একটি বিপুল অংশ গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ পরিবারের সন্তান। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবার, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা বা বৃদ্ধ বাবা-মা। এ সংকটময় সময়ে তারা রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার শপথ নিয়ে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছেন। এক নতুন পরিচয়ে পুলিশ যেন আমাদের সামনে। নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে এদেশের জনগনের পাশে দাড়িয়েছে পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য।
বাংলাদেশে পুলিশের ভূমিকা গৌরবের। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী ছাড়া পুলিশের মূল অংশ জনসাধারণের পাশে থেকেছে এমন উদাহরণই বেশি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এ বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে পুলিশ সদস্যরা তাদের সর্বেোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে। দেশব্যাপী করোনার ক্রান্তিকালে সবাই যখন ভাইরাসের সংক্রামন থেকে বাঁচার জন্য দিশেহারা এবং আতঙ্কগ্রস্থ তখন বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের ত্যাগ স্বীকার আবারও নজির স্থাপন করেছে। সকল নিয়ম প্রথা ভেঙ্গে সরকারী নির্দেশের বাইরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বক্ষণ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ নামের মানুষগুলো। একজন সন্মুখ সারির অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে বাড়িতে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবার দুরুহ কাজটি করে যাচ্ছেন তারা। আবার কখনো একজন সমাজকর্মীর মতো মানুষের পাশে গিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এ যেন মানুষের জন্য তাদের এক অন্যরকম সহানুভূতি। প্রতিনিয়ত মানবিক গুনাবলী নিয়ে পুলিশ সদস্যরা মানুষের সামনে হাজির হচ্ছে। মানুষ, মানবিকতা ও দেশ এ তিনটি মন্ত্রে এখন তারা এখন দীক্ষিত।
সমাজিক যোগযোগ মাধ্যমে পুলিশের মানবিক দিকগুলো দেখলে আমাদের গর্বে মন ভরে যায়। যখন দেখি লক ডাউনের মধ্যে রাতের আধারে মানুষের বাড়িতে নিজে কাঁধে বহন করে খাবার পৌঁছানো, জরুরী ওষুধ কিনে এনে কারও হাতে তুলে দেওয়া, ভাসমান, ভবঘুরে ক্ষুর্ধাত মানুষের মুখে রাম্না করা খাবার বিতরণ, চিকিৎসার জন্য রোগীকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া , সন্তান সম্ভবা বিপন্ন মাকে কাঁধে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিছবি আমাদের ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগ্রত করে তুলেছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা পিতা মাতার শিখানো নীতি-আদর্শ এবং মর্মত্ববোধ বির্সজন দেননি। ভুলে যাননি এ মাটির ঋণ। দেশ ও জনগণের জন্য তারা জীবন বাজি রেখে মরতেও পারে।
পুলিশ করোনা সঙ্কটের শুরু থেকে আইনি ব্যবস্থা, খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরী সেবা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, মজুদদারি, মুনাফখোর ও কালোবাজারি রোধ, সরকারী ত্রাণ ও টিসিবির পণ্য বিতরণে সহযোগিতা, সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন, খোলা স্থানে বাজার স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনাসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকা সত্ত্বেও এ মানবিক এবং পেশাদারিত্বের কাজগুলো করে চলেছে পুলিশ ভাইরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত পুলিশের ১২০০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নিহতের সংখ্যা ১২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাধীন আছেন ৫২৮ জন। আইসিইউতে আছে ৬ জন। এখন যেটি প্রয়োজন তা হলো ডাক্তারদের মত পুলিশ সদস্যদেরও সুরক্ষা দেয়া। তাদের প্রতি সাহস যোগানো মমত্ব দেখানো। আমাদের সকলের কর্তব্য হবে পুলিশ যেন আমাদের পাশে থেকে তার মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য তাদের সহায়তা করা।
লেখক পরিচিতি : রতন কুমার মজুমদার ,অধ্যক্ষ , পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ , চাঁদপুর