ভূগর্ভস্থ ১৩৫ ফুট গভীরেও মিলছে না পানি
দিনাজপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি উত্তোলনে নানা সমস্যার কারণে চাষিরা বাধ্য হয়ে কম সেচের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনে ও বিদ্যুৎচালিত মোটর পাম্পে (সেচ পাম্প) পানি না ওঠায় বোরো ও ভুট্টা ক্ষেতে পানি সেচ দেয়ার জন্য কুয়ার মতো ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামানো হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিমে নেমে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে ধানসহ সেচনির্ভর চাষাবাদ কমেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতি ১০ বছরে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর প্রায় ১০-১৫ ফুট নিচে নামছে। ৩০ বছর আগে যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৩০ ফুটে, অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৯০ ফুট অথবা তার চেয়েও বেশি গভীরে। ১৯৮৫ সালের খরা মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর ছিল গড়ে ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি, ১৯৯৫ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় ৩০ ফুটে। ২০১০ সালে পানির স্তর নেমেছে ৬৬ ফুটে। ২০১৯ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ ফুটে। এ অবস্থায় কৃষকরা ধান উৎপাদনে চরম সঙ্কটে পড়েছে।
দিনাজপুর সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, খানসামা, নবাবগঞ্জ উপজেলায় পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার পানি স্তর নেমে যাওয়ায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটরগুলো এত গভীর থেকে পানি টেনে ওপরে তুলতে পারছে না। এতে কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরগুলো কুয়ার মতো করে ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামিয়েছে। টিউবওয়েলগুলোতেও পানি উঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চৈত্র মাস পড়লে এ অবস্থা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। সে সময় গ্রামগুলোতে দেখা দেবে পানির জন্য তীব্র হাহাকার। অনেক এলাকায় চাষাবাদ তো দূরের কথা, মানুষের খাবার পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে।
শনিবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মহিষকোঠা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শতশত ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটর ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামনো হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকরা গর্তের মধ্যে নেমে সেই শ্যালো মেশিন ও মোটরগুলো চালাচ্ছে। গর্তে নামার জন্য রাখা আছে মই।
কৃষকরা বলছেন, এত গভীরে নেমে পানি উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গর্তে পানি জমে বিদ্যুতায়িত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গর্গুলো যেন কৃষকের মৃত্যু ফাঁদ। একই অবস্থা দেখা গেছে বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, খানসামা, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষক আব্দুল আজিজ ও মোসাদ্দেক হোসেন জানান, মেশিনগুলো বাধ্য হয়ে গর্তে নামানো হয়েছে। তারা বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় পানি রিজার্ভ করে রাখা গেলে পানি যেমন সহজেই পাওয়া যাবে, তেমনি কৃষিতে সেচ খরচও কমে যাবে।
দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুরাদ হোসেন বলেন, আপাতত জনগণকে টিউবওয়েল বসানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ২৬টি করে তারা পাম্প চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১০২টি ইউনিয়ন রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে।