• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জে গৃহবধূর আত্মহত্যা ॥ ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে ৩ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির ঘটনায় তোলপাড়

প্রকাশ:  ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাজীগঞ্জে গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় ইউপি সদস্যের ৩ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। এই আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে থানায় মামলা হলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আনিছুর রহমান সোহেলের মধ্যস্থতায় ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করা হয় এবং পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসের হাতে দেড় লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি সদস্য সোহেলসহ কয়েকজন ভাগ-বন্টন করে নিয়েছে দেড় লক্ষ টাকা ।
গত ১৫ অক্টোবর ভোরে ইঁদুর মারার ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে পপি রাণী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী ঝুটন চন্দ্র দাস এবং চাচা শ^শুর অমল চন্দ্র দাস। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পপি রাণী দাসকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর ভর্তি রাখলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে পপি রাণীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।  প্রায় ৪ দিন পর ১৯ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনায় সমঝোতাকে কেন্দ্র করে ৩ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এলাকায়।
পপি রাণী দাসের স্বামী ঝুটন চন্দ্র দাস একটি এনজিওতে সামান্য বেতনে চাকরি করেন। যা দিয়ে টানাটানির মধ্যে সংসার চলছিল। স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় অনেকটাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে তার পরিবারের। এর মাঝে শিশু সন্তান নিয়েও বিপাকে রয়েছে ঝুটনের পরিবার। এই ঘটনায় এনজিও ‘অন্বেষা’ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পপি রাণী দাসের পরিবারের দাবি মেটাতে হয়েছে। যেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ইতঃমধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এ পরিবার।
প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের দক্ষিণ ধোপা বাড়ির জয় রামের ছেলে ঝুটন চন্দ্র দাসের সাথে কচুয়া উপজেলার পালাখাল ইউনিয়নের বাচাইয়া মাঝি বাড়ির জীবন বিশ^াসের মেয়ে পপি রাণী দাস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এর মাঝে তাদের এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো। পপিরাণী দাস জেদী স্বভাবের কারণে কোনো ঘটনা সহজে মেনে নিতে পারতেন না।
ঝুটনের চাচা অমল চন্দ্র দাস বলেন, যা চাওয়া হয়েছে আমরা তা দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা আর কোনো কথা বলতে চাই না। হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করার কারণে আমি বাড়িতে এসেই ঘুমিয়ে পড়ি। পরে জানতে পারি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে একটি সমাধান হয়েছে। আমাদের কাছে যা চেয়েছে তা আমরা দিয়েছি। এর জন্যে অন্বেষা থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন জায়গা বিক্রি করে তা পরিশোধ করতে হবে।
পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে ফোন কেটে দেন।  ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সোহেলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঝুটন চন্দ্র দাসের বাবা জয়রাম দাসের কাছ থেকে আমি ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছি। এর মধ্যে পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে ফাঁদে ফেলে একটি পক্ষ আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। কারা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আপনাদের সাথে দেখা করবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই. সাধন চন্দ্র বলেন, পপি রাণী দাস বিষক্রিয়ায় মারা গেছে নাকি অন্য কোনো কারণে মারা গেছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। তিনি বলেন, পপি রাণীর শ^শুরের পরিবার থেকে কেউ টাকা নিয়েছে কিনা আমি জানি না, তাদের কাছ থেকে থানা পুলিশ এক টাকাও নেয়নি। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে মৃতদেহ বাড়িতে আসলে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মেডিকেল রিপোর্ট আসলে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত বলা যাবে।  এ বিষয়ে অর্থ বাণ্যিজ্যের সাথে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। থানায় আসলে মেয়ের বাবাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি এ ঘটনায় খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

সর্বাধিক পঠিত