খালার বাসা, ভাইয়ের বাড়ি দৌড়ে ছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম
গত ২০ দিন মোয়াজ্জেম ঢাকার আত্মীয়ের বাসায় আবার কখনো গ্রামের বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশির বাসায় এবং কখনো ঢাকার বাইরের অন্য জেলায় ছিলেন। গত শনিবার রাত থেকেই ওসি মোয়াজ্জেমের অবস্থান ঢাকায় বলে নিশ্চিত হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। সকালে আদালতে আইনজীবীর চেম্বারে গেলে সেটিও টের পায় ডিবি। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
শাহবাগ থানা পুলিশের একটি সূত্র রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘আলাপচারিতায়’ ওসি মোয়াজ্জেম কিভাবে পালিয়ে ছিলেন সেটা জানান। তিনি প্রথমে ঢাকার কল্যাণপুরে তাঁর এক খালার বাসায় ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে টের পেয়ে গত ১০ জুন তিনি সেখান থেকে সটকে পড়েন।
এরপর যান কুমিল্লায়, যেখানে তাঁর নিজের বাড়ি আছে। তিনি নিজের বাড়িতে না উঠে চান্দিনায় খালাতো ভাই আসাদুজ্জামানের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। এই আসাদুজ্জামান চান্দিনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত)। এ তথ্য পুলিশ পেয়ে চান্দিনায়ও অভিযানে যায়। টের পেয়ে গত শুক্রবার রাতে ওই বাসা থেকে ঢাকায় চলে আসেন মোয়াজ্জেম। এরপর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও বন্ধু খায়রুল ইসলামের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকেই রবিবার আদালতে যান।
খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মোয়াজ্জেম শনিবার রাতে ঢাকায় তাঁর বাসায় ছিলেন। জামিনের জন্য তিনি ঢাকায় ঘুরছিলেন।
যেভাবে গ্রেপ্তার হন
মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া শাহবাগ থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, যেহেতু তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাই গ্রেপ্তারের সময় তাঁকে সম্মান দেখানো হয়েছে। তিনি মোয়াজ্জেমকে বলেন, ‘স্যার, আপনি গ্রেপ্তার। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট’। এটা শুনে তাত্ক্ষণিক মোয়াজ্জেমের মুখ কালো হয়ে যায়। তিনি কিছুটা আতঙ্কিতও ছিলেন। তবে তিনি মুখে কোনো কথা না বলে শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিয়ে ধরা দেন। এরপর শাহবাগ থানার পুলিশের গাড়িতে (পিকআপ) করে তাঁকে নেওয়া হয় শাহবাগ থানায়। সেখানে পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে নেওয়া হয় তাঁকে। একটি চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় মোয়াজ্জেমকে। তখন তিনি ঘামছিলেন। কিছুটা অসুস্থ লাগছিল তাঁকে। তবে কথা বলছিলেন না। কেউ তাঁকে তখন কোন বিষয়ে প্রশ্নও করেনি।
সরেজমিনে শাহবাগ থানায় গিয়ে পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে দরজা বন্ধ দেখা যায়। এক পর্যায় দরজার ফাঁক দিয়ে মোয়াজ্জেমকে বিমর্ষ অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের খবরে সেখানে গণমাধ্যম কর্মীরা ভিড় করেন। তবে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা ওসি মোয়াজ্জেমের ছবি তুলতে দেননি। তাঁরা অনুরোধ করে বলেন, থানায় আসামির ছবি তোলা যায় না। আদালতে নেওয়ার সময় যেন সাংবাদিকরা ছবি তোলেন।
ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সবার চোখ ফাঁকি দিতে মোয়াজ্জেম দাড়ি ও গোফ বড় করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আদালত থেকে জামিন নেওয়া। মোয়াজ্জেমের সাবেক গাড়িচালক (ব্যক্তিগত) মো. জাফর শাহবাগ থানার সামনে কালের কণ্ঠকে বলেন, জামিনের জন্য তিনি (মোয়াজ্জেম) এসেছিলেন হাইকোর্টে। সঙ্গে জাফরও ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের চেম্বারে যান। সেখান থেকে জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনটির নম্বর পরে- ৪২৭৭০। দুপুর ১টার দিকে আদালত থেকে শুনানির তারিখ পিছিয়ে কাল সোমবার দিলে তিনি চলে আসেন। বিকাল ৩টার পর আদালত থেকে বের হন মোয়াজ্জেম। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আগাম জামিনের আবেদন এখন অকার্যকর
বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম ও বিচারপতি খিজির হায়াতের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী সালমা সুলতানা। এই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য গতকাল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির অনুমতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আজ (রবিবার) দুপুর ১টার দিকে আদালত মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের আবেদন কার্যতালিকায় আনতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। আদালত অনুমতি দিলে তিনি আজই সম্পূরক কার্যতালিকা করে শুনানির আরজি জানান। কিন্তু আদালত আগামীকালের (সোমবার) কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানিয়ে দেন।
মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী সালমা সুলতানা বলেন, আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আগামীকাল (সোমবার) এই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আদালত। কিন্তু তিনি (মোয়াজ্জেম হোসেন) গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায় এই আবেদনের আর কার্যকারিতা থাকল না।কালের কণ্ঠ