খেজুর নিয়ে খেলছে যারা
রমজানকে সামনে রেখে রেকর্ড পরিমাণ খেজুর আসার পরও নাগালের বাইরে আছে দাম। রোজার আগের ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৩৪ কোটি টাকায় ৩৫ হাজার ৪০৯ টন শুকনো ও ভেজা খেজুর আনেন ৮০ ব্যবসায়ী। শুল্ক্ক দেওয়ার পর প্রতি কেজির দাম পড়ে ৬৭ টাকা। অথচ বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। এ হিসাবে আমদানি মূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি খেজুর।আমদানির চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমদানি করা মোট খেজুরের ৭০ শতাংশই ২৫ ব্যবসায়ীর কাছে। ফলে সিন্ডিকেট করে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এভাবে তারা তুলে নিচ্ছেন মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা।গেল বছরের অক্টোবর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত আমদানি চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রমজানকে ঘিরে এবার পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি হয়েছে দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ভেজা খেজুর। দুই ধরনের প্যাকেটে খেজুর এসেছে। একটি সর্বোচ্চ আড়াই কেজির প্যাকেট। আরেকটি আড়াই কেজির ওপরের প্যাকেট। কিছু ব্যবসায়ী শুকনো ও ভেজা উভয় খেজুর আমদানি করেছেন। তবে সর্বোচ্চ আড়াই কেজির প্যাকেটে ভেজা খেজুর এনেছেন ১৫ ব্যবসায়ী। ১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় মোট ১ হাজার ৯৭১ টন খেজুর আনেন তারা। আবার আড়াই কেজির ওপরে ভেজা খেজুর এনেছেন ৬০ ব্যবসায়ী। ২১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় তারা ৩২ হাজার ২৩০ টন খেজুর এনেছেন। আড়াই কেজির বড় প্যাকেটে শুকনো খেজুর এনেছেন ১৫ ব্যবসায়ী। ৫ কোটি ৯২ লাখ টাকায় তারা ১ হাজার ২০০ টন খেজুর এনেছেন। সব মিলিয়ে রমজানকে সামনে রেখে এবার ২৩৪ কোটি টাকায় ৩৫ হাজার ৪০৯ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এসব খেজুর খালাসের আগে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে শুল্ক্ক পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে শুল্ক্কসহ প্রতি কেজি খেজুরের দাম পড়েছে ৬৭ টাকা। অথচ বাজারে প্যাকেটজাত এসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮শ' থেকে দেড় হাজার টাকায়।
সৌদি আরবের আজওয়া খেজুর প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দরে। মেকজেল খেজুর কেজিপ্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা। ইরানের কামরাঙ্গা মরিয়ম ১০০০ টাকা, সাধারণ মরিয়ম ৮০০ টাকা, তিউনিসিয়ার প্যাকেটজাত খেজুর ৪৬০ টাকা, দাবাস ২২০ টাকা, ফরিদা ৩০০ টাকা, বড়ই ২২০ টাকা, নাগাল ২০০ টাকা ও বাংলা খেজুর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি কেজি খেজুর আমদানি মূল্যের চেয়ে কমপক্ষে দুই গুণ ও সর্বোচ্চ ২০ গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।আমদানির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৮০ ব্যবসায়ী খেজুর আমদানি করলেও দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেটে রয়েছেন ২৫ জন। চাহিদার খেজুরের বেশিরভাগ এককভাবে আমদানি করে এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭০০ টন থেকে সর্বনিম্ন ১০০ টন খেজুর আমদানি করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এরাবিয়ান ডেটস ফ্যাক্টরি, মেসার্স আরাফ এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহর রহমত স্টোর, মদিনা ফ্রুটস লিমিটেড, রয়েল ফ্রেশ ফুডস, সাপোয়ানা ফুড ট্রেডিং করপোরেশন, রামিসা এন্টারপ্রাইজ, এডি ফ্রুটস লিমিটেড, হৃদয় এন্টারপ্রাইজ, সাউদার্ন ট্রেডিং, জেবি অ্যান্ড ব্রাদার্স, জেসপার ট্রেডিং, ওয়াসিফ ট্রেডিং, আল আনসার ফুডস, আস সাফা ওয়াল মারওয়া ট্রেডিং, ফারিয়া ট্রেডিং, মনসুর কোল্ড স্টোর, প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ, হারুন স্টোর, শাকিল ফ্রেশ ফ্রুটস কোম্পানি, ট্রেড লিঙ্ক এজেন্সি, রিজভী ফ্রুটস, সবুজ এন্টারপ্রাইজ, সুপ্তি ট্রেডার্স ও লায়াম ফ্রেশ ফ্রুটস।
এ ব্যাপারে চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রমজানে এবার তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। খেজুরের দাম কেন লাগামছাড়া, তা খতিয়ে দেখা উচিত। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে দেশের ১৬ কোটি মানুষ কষ্ট পাক, এটা আমরাও চাই না।সমকাল খাতুনগঞ্জের অন্যতম খেজুর আমদানিকারক অমল ভূষণ নাগ বলেন, 'খেজুর পচনশীল পণ্য। যা আনা হয় তার অর্ধেক অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই উন্নতমানের প্যাকেট খেজুরের দাম একটু বেশি।'