দক্ষ কর্মীর অভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে না ডিএনসিসির অনলাইন সেবা!
গৃহকর এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি অনলাইনে নেওয়ার জন্য গত ৫ ডিসেম্বর দেশের পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। জনভোগান্তি কমানো এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা সফটওয়্যার দিয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সেবাটি চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুটি ব্যাংকের এখনো সেবা প্রদানে এগিয়ে না আসা, ডিএনসিসির পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসের লোকবল সংকট, নামে অনলাইন হলেও অতিরিক্ত সময় ব্যয় এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অতিরিক্ত ফির কারণে অনলাইট সেবাটি নগরবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করতে পারছে না ডিএনসিসি। এর মধ্যে দক্ষ জনবল সংকটই বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনসিসি সেবাটি চালু করলেও গত প্রায় পাঁচ মাসে মাত্র ৩০০ সেবাগ্রহীতা অনলাইনে গৃহকর জমা দিয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ফি জমা নেওয়ার সেবা এখনো চালুই করতে পারেনি ডিএনসিসি। দক্ষ কর্মীর অভাব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গৃহকর প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হওয়ায় সেবাটি জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, ডিএনসিসির পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসে অনলাইনে জমা দিতে উৎসাহিত করলেও এ পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ পাঁচটি অফিসে দক্ষ জনবল না থাকায় সময়ও লাগে বেশি। এ ছাড়া পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করলেও বর্তমানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংক থেকে অনলাইনে গৃহকর প্রদান করা যায় না। বিশেষ করে সোনালী এবং জনতা এই দুই ব্যাংকে এখনো অনলাইনে গৃহকর প্রদান করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গৃহকর পরিশোধ করার জন্য ফি প্রদান করতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ খরচের জন্য অনলাইনে কর পরিশোধ না করে সরাসরি অফিসে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে সেবাগ্রহীতারা।
ডিএনসিসির অঞ্চল-২ অফিসে গৃহকর পরিশোধ করতে আসা আনিসুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘অনলাইনে গৃহকর প্রদানের ব্যাপারে অফিসাররা আমাকে বলেছেন। বাড়ির মালিকের তথ্যও চেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু অনলাইনে ট্যাক্স দিতে গেলে সময় বেশি লাগে। তাই আমি সরাসরি দিয়েছি।’ডিএনসিসির ১ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম ফকির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরাসরি অফিসে এসে গৃহকর জমা দিতে অভ্যস্ত মানুষ। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গৃহকর পরিশোধ করতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হওয়ায় সেবাটি জনপ্রিয় হচ্ছে না।’
ডিএনসিসির তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ ১৫ হাজার বাড়ির মালিক গৃহকর প্রদান করেন। প্রায় ৪২ বছর আগে গৃহকর মূল্যায়ন করেছিল তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। তৎকালীন কর দাতাদের ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর না থাকায় এখনো সম্পূর্ণ অনলাইননির্ভর করা যাচ্ছে না সেবাটি। এখন যারা গৃহকর প্রদান করতে আসছে তাদের তথ্য সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। কমপক্ষে একজন সেবাগ্রহীতাকে অনলাইনে গৃহকর পরিশোধে উৎসাহিত করার জন্য পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসকে নির্দেশ দিয়েছে ডিএনসিসি। পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করলে মাত্র দুটি ব্যাংকে অনলাইনে পরিশোধ করা যাচ্ছে গৃহকর। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গৃহকর প্রদানের সুযোগ রয়েছে বলে জানান ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ফি অনলাইনে পরিশোধ করার সুযোগ এখনো করতে পারেনি ডিএনসিসি। ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনভোগান্তি কমাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তৈরি করে দেওয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে গৃহকর নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। দক্ষ জনবল না থাকা বড় প্রতিবন্ধকতা আমাদের জন্য।’
ট্রেড লাইসেন্স ফি অনলাইনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। বিষয়টি বেশ জটিল। তাই এখনো অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ফি জমা নেওয়া যাচ্ছে না।কালের কণ্ঠ