ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা, কারেন্ট জালে আটকা
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা রক্ষায় সরকার দুই মাস সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিনে ও রাতের আঁধারে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে ঝাঁকেঝাঁকে জাটকা ইলিশ ধরছে জেলেরা। এসব জাটকা ইলিশ দেদারসে বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মণ জাটকা জব্দ এবং জড়িতদের আটকের পর জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবাধে জাটকা নিধন চলছে রায়পুরের মেঘনায়। এক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।গত দুইদিন রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছেন। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাট-বাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। গত সোম ও মঙ্গলবার পৃথক দুটি পিকআপ ভ্যানে করে প্রায় ৫০ মণ জাটকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন চার ব্যবসায়ী। পুলিশ পৃথক স্থান থেকে জাটকাসহ ওই চার ব্যবসায়ীকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে এবং জব্দ করা জাটকাগুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করে।এছাড়াও গত মাসে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড নদীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরও প্রায় ৫০ মণ জাটকা জব্দ ও কয়েক জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। চরইন্দুরিয়া এলাকার জেলে মো. নজরুল ও পলাশ মিয়া তিনদিন ধরে মেঘনা নদীর কাটাখালী এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে চরবংশী আলতাব হোসেনের ঘাটে ওই জাকটাগুলো বিক্রির জন্য আনা হয়। এ সময় তারা বলেন, এ নদীতে এখন জাটকা ইলিশ ধরা পড়ে বেশি। প্রশাসনের লোকজন আমাদের ধরলে তদবির করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।ভালো অফিসার হলে কিছু মাছ নিয়ে ছেড়ে দেয়। না হলে, চালান করে দেয়।
চরবংশী এলাকার জেলে আনোয়ার গাজী বলেন, আড়ত থেকে দাদনে নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় মেঘনা নদীর বিভিন্ন জায়গা জাল ফেলছি। তবে বৈশাখের কারণে জাটকা শিকারের এ মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। রাতের আঁধারে নদীতে প্রতিদিন আমার মত অনেক জেলেই জাটকা ধরছে। এসব মাছ আড়ত থেকে রাতে ট্রলার, পিকআপ ভ্যান, বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার মোকামে যাচ্ছে।উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বাজারে কিছু কিছু জাটকা বেচাকেনা করতে দেখা যাচ্ছে। ওই সব জেলেদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে নিরাপদ করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও কিছু অসাধু জেলেরা জাটকা শিকারের চেষ্টা করছেন। জাটকা শিকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।প্রসঙ্গত- কর্মসূচির আওতায় ২০০৬ সাল থেকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেক্সান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদীতে দুই মাস জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ জন্য মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসন ১ মার্চ থেকে মেঘনায় সব ধরনের জাল ফেলা বন্ধ করে দেয়।ইত্তেফাক