• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

উত্তরাধিকার

কিশোরগঞ্জের ৬ আসনের তিনটিতেই প্রার্থী পুত্ররা

প্রকাশ:  ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৩ | আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৪
অনলাইন ডেস্ক
প্রিন্ট

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কিশোরগঞ্জের ৬টি সংসদীয় আসনের তিনটিতেই উত্তরাধিকার আজ বাস্তবতা। সময়ের বিবর্তনে ও রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখার প্রয়োজনে পিতার নির্বাচনী আসনে প্রার্থী হয়েছেন পুত্ররা। আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য বলে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। সবাই ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন বিষয়টিকে। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে নাজমুল হাসান পাপন ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। পাচ্ছেন জনমানুষের সমর্থনও। নিজ নিজ পিতার আসনেই বর্তমানে এমপি তারা।

কিশোরগঞ্জের রাজনীতির প্রবাদপুরুষ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। স্বাধীনতার আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠজন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুদৃঢ় সাহসিকতায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তার অবর্তমানে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে তার  জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পরপর চারবার সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে তিনি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় বিজয়ী হলে তিনি সে দুটি সরকারেও এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ অধিকতর লাইমলাইটে আসেন ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। রাজনীতির কঠিনতম ওই সময়ে দলের ঐক্য ধরে রাখার জন্য প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন, পরবর্তী সময়ে সেই বিচক্ষণতাই তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন করে। সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে বর্তমানে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। তারপরও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জননন্দিত নেতা হিসেবে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর) আসন থেকে তিনিই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন বলে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন। তা ছাড়া কিশোরগঞ্জের জনমনে এই ধারণা বদ্ধমূল যে, পরিচ্ছন্ন ইমেজের সৈয়দ আশরাফ যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন ওই নির্বাচনী আসনটি তার জন্যই নির্ধারিত থাকবে।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের ৬ বারের এমপি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র নাজমুল হাসান পাপন এই আসনে পর পর দু'বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও পাপন এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিত সবাই।

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে তিনি ৭ বারের জনপ্রিয় এমপি ছিলেন। রাজনীতির চরম দুঃসময়েও আদর্শচ্যুত হননি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হন তিনি। একই সংসদের স্পিকার হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর স্পিকার হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৮ সালের সংসদে তিনি পুনরায় স্পিকারের দায়িত্ব পান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যু হলে মো. আবদুল হামিদ প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ বছর তিনি আবারও দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ায় তার নির্বাচনী আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়। শূন্য আসনে দলীয় মনোনয়ন পান তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এই আসনে প্রথমে উপ-নির্বাচনে এবং পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৌফিক বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। পিতার রাজনীতির উত্তরাধিকারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে তৌফিকই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী।

সময়ের প্রয়োজনে উত্তরাধিকারের সংস্কৃতি কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভূষণ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করে, এই ভূষণকে অবলম্বন করেই কিশোরগঞ্জে প্রশ্নহীন আবহে আবর্তিত হবে আগামী কয়েক দশকের রাজনীতি।

সূত্র : সমকাল।

সর্বাধিক পঠিত