• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

তরিকুলের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত, বিএনপির শ্রদ্ধা

প্রকাশ:  ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৩২ | আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪
চাঁদপুর পোস্ট ডেস্ক
জানাজা নামাজের দৃশ্য
প্রিন্ট

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।

সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহম্মদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী অংশ নেন।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়ে আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ও দলের কঠিন সময়ে তিনি চলে গেছেন। তার এই চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।

তিনি বলেন, তরিকুল ইসলাম দল ও দেশের কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অন্যায়ের সঙ্গে কখনো তিনি আপস করেননি। ফলে দল হারালো উচ্চ মানের প্রজ্ঞাবান একজন নেতাকে। আর জাতি হারালো একজন নেতাকে।

এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে লাশবাহী গাড়িতে তরিকুল ইসলামের মরদেহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। জানাজা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ফুল দিয়ে দলীয় পতাকায় মোড়ানো তরিকুল ইসলামের কফিনে  শেষ শ্রদ্ধা জানান।

নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক।

রোববার ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তরিকুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

রোববার সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামের মরদেহ তার ঢাকার শান্তিনগরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বজনরা দেখার পর রাতে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয় মরদেহ।

এদিকে বরেণ্য এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে আজ শোক পালন করছে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী বিএনপির অফিসে দলীয় ও কালো পতাকা তোলা হয়েছে এবং নেতা-কর্মীদেরকে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা গেছে।

এর আগে রোববার রাতে শান্তিনগর মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া আজ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজায় তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় যশোর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হবে।

তরিকুলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। জীবদ্দশায় তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গন আলোকিত করে ছিলেন তরিকুল ইসলাম। রাজনীতি করতে গিয়ে দীর্ঘ নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তাকে।

তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন যশোর শহরে। তার পিতা আলহাজ আবদুল আজিজ ছিলেন যশোর শহরের ব্যবসায়ী। মা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম গৃহিণী। পারিবারিক পরিবেশে বাল্যশিক্ষার মাধ্যমে পড়ালেখায় হাতেখড়ি তার। ১৯৫৩ সালে তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬১ সালে জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৩ সালে এমএম কলেজ থেকে আইএ, ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন দুই ছেলের জনক। স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম যশোর সরকারি সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে যান। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নার্গিস ইসলাম চারদশক ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নেপথ্যে ভূমিকা রেখে চলেছেন। বর্তমান তিনি যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন।

তরিকুল ইসলামের বড় ছেলে শান্তুনু ইসলাম সুমিত ব্যবসার পাশাপাশি দৈনিক লোকসমাজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান। ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত রাজনীতি করেন। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত অমিত বর্তমানে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

১৯৬২ সালের দিকে তরিকুল ইসলাম যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন এমএনএ আহম্মদ আলী সর্দারের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় কিছু দিন কারাভোগ করেন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ নয় মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজশাহী কারাগারে ছিলেন।

পরে কমিউনিস্ট পার্টির নীতি-আদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে না পেরে বেছে নেন নতুন পথ। ১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে কথা বলে যেমন কারাভোগ করেছেন, দেশ স্বাধীনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল।

ভাসানী ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন তরিকুল ইসলাম। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। পরে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি পান।

১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তরিকুল ইসলাম নাম লেখান জনপ্রতিনিধির খাতায়। পরে ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত ও ১৯৮১ সালে সড়ক ও রেলপথ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী চরিত্র হলেও ভোটের রাজনীতিতে তার রয়েছে মিশ্র অভিজ্ঞতা। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে বিএনপি সরকার গঠন করলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান টেকনোক্রাট কোটায়। পরের বছর হন পূর্ণমন্ত্রী।

১৯৯৪ সালের উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন তরিকুল ইসলাম। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পর্যায়ক্রমে খাদ্য, তথ্য ও সর্বশেষ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন তিনি।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করায় প্রার্থী হননি তিনি।