ঢাকা কলেজের ছাত্র কাব্য মিথ্যা মামলায় কারাগারে
চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী ছাত্রী শাখার এক ছাত্রীর সাথে প্রেম সংক্রান্ত ঘটনার জেরে এক কলেজ ছাত্রকে মিথ্যা মামলায় আসামী কারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে ঢাকা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র আরাফাত খান কাব্য (১৯) বেশ কয়েকদিন যাবৎ চাঁদপুর জেলা কারাগারে হাজতবাস থাকায় তার জীবন এখন ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ ছাত্র কাব্যকে মামলা থেকে রেহাই দেয়ার কথা বলে কাব্যর বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন ওই ছাত্রীর ভাই ওমর খান ও মামা খায়ের মিজি। এরপরও সালিস বসে ঘটনার সমাধান হয়ে যায়। সমাধানের পরও মিথ্যা মামলা দিয়ে মেধাবী ছাত্র কাব্যকে জেল হাজতে পাঠায়। বাবা-ছেলেকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে তাদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করে মেধাবী ছাত্র কাব্যের জীবন নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী রোডস্থ ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা মৃত শাহজাহান খানের মেয়ে আল-আমিন একাডেমী ছাত্রী শাখার কলেজ ছাত্রী শাহনাজ আক্তারের সাথে একই এলাকার বাসিন্দা হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী স্যাফায়ার ইলেক্ট্রনিঙ্রে মালিকের ছেলে কলেজ ছাত্র আরাফাত খান কাব্যের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এ ঘটনা জানতে পেরে ছাত্রীর ভাই ওমর খান ও তার মামা খায়ের মিজি ক্ষিপ্ত হন। গত ৪ জুলাই বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রীটির ভাই ওমর খান ও তার মামাতো ভাই সুপার স্টার কোম্পানীর চাঁদপুর ডিস্ট্রিউবিটরের ডেলিভারিম্যান ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের রালদিয়া কালু মিজি বাড়ির শাহজাহান মিজির ছেলে রাজিবসহ আরো কয়েকজন হকার্স মার্কেটে স্যাফায়ার ইলেক্ট্রনিঙ্ দোকানে যায়। তখন মেয়ের মামাতো ভাই রাজিব স্যাফায়ার ইলেক্ট্রনিঙ্ দোকানের ভেতরে ঢুকে কাব্যর বাবা মানিকের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরেই কলেজ ছাত্র কাব্য তাদের দোকানে আসলে রাজিব ও তার সাথে থাকা অন্যদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাতাহাতির একপর্যায়ে রাজিব ও দোকানের কর্মচারী আহত হয়। পরে কাব্যর বাবা মানিক খান আহত রাজিবকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে নিজের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করায়।
কাব্যর বাবা মানিক খান জানান, ঘটনার তিনদিন পর ৭ জুলাই কলেজ ছাত্রী শাহনাজের ভাই ওমর খান বাদী হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে কাব্য ও তার বাবাকে আসামী করে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরেই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খায়ের মিজির দোকানের উপরে একটি অফিসে উভয়ের পরিবারের লোকজন সমাধানের জন্যে বসেন। এ সালিসে মেয়ের মামা খায়ের মিজি মামলা তুলে নেয়ার জন্যে ৫০ হাজার টাকা কাব্যর বাবা মানিক খানের কাছ থেকে চান। মানিক ৫০ হাজার টাকার চেক যারা সালিস করেছেন তাদের কাছে জমা দেন। কিন্তু প্রতারণা করে ঐ দিন রাতেই কলেজ ছাত্র কাব্যকে পুলিশ দিয়ে আটক করায়।
কাব্যর বাবা মানিক খান জানান, তার পুত্র ঢাকা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র। সে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ১৩ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্যে চাঁদপুরে আসে। এখান থেকে তার পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা থাকলেও মিথ্যা মামলায় এখন তাকে হাজতবাস খাটতে হচ্ছে। তার জীবন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ বছর সে আর পরীক্ষা দিতে না পারায় তার জীবন থেকে একটি বছর পিছিয়ে গেল। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে, ছেলে প্রতিনিয়ত মেয়েকে বিরক্ত করতো। কিন্তু ছেলের মোবাইলে কললিস্ট থেকে পাওয়া যায়, মেয়ে শাহানাজ আক্তার ছেলে কাব্যকে প্রতিদিন ফোন করতো এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে ফোনে কথা বলতো।
এদিকে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্যে শাহনাজের মামাতো ভাই রাজিব ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে আদালতকে জানায়। এই প্রতিবেদক গতকাল রোববার দুপুরে রাজিবকে ফোন করলে সে ঢাকায় চিকিৎসার জন্যে রয়েছে বলে জানায়। এর কিছুক্ষণ পরে সরজমিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সে তার ঘরেই রয়েছে। মিথ্যা কথা বলার কারণ জানতে চাইলে রাজিব জানায় কাকা খায়ের মিজির কথায় ঢাকা আছি বলেছি। কাকা বলেছে ঘর থেকেও বের হতে না। তাই আমি মিথ্যা কথা বলেছি। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানসহ কলেজ ছাত্র আরাফাত খান কাব্যর জীবন রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন কাব্যর বাবা মানিক খান।