কুমিল্লায় সড়ক বেহাল দুর্ভোগে লাখো মানুষ
কুমিল্লা মহানগর ও জেলার ৮টি পৌর এলাকাসহ ১৭টি উপজেলা এলাকার এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়কে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো কোনো সড়কে স্বাভাবিক চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের কোনোটি সংস্কারের এক বছরের মধ্যে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে, আবার কোনটি এক যুগেরও অধিক সময় ধরে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। এতে গর্ত আর খানা-খন্দে ভরা সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কৃষিজীবী-শ্রমজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ। সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীন জেলায় ১০ হাজার ২শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়কের সাড়ে ৫শ কিলোমিটারের অবস্থা বেহাল। জেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানের সড়কগুলোতে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কাঁচা-পাকা মিলিয়ে জেলার এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক ভাঙাচোরা। বেহাল এসব সড়কের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কও রয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব সড়কে দীর্ঘদিন ধরে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে আছে। দিন দিন গর্তের সৃষ্টি হয়ে এর গভীরতা বাড়ছে। জেলা সদর ছাড়াও সদর দক্ষিণ, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, বরুড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাসসহ বিভিন্ন উপজেলা সদর, পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমপক্ষে এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক সংস্কারের অভাবে ইট-সুরকি উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে প্রায়ই যানবাহন আটকে যাচ্ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারণে সড়কটি বন্ধ রয়েছে।
এতে শাসনগাছা থেকে ধর্মপুর সড়কটি মূল সড়কে রূপ নিয়েছে এবং এতে এ সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। আশপাশের বাসাবাড়ির পানি সড়কের গর্তে জমাট বেধে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। ওই সড়ক থেকে সাতরা সড়ক এবং কৃষি অফিসের পাশের সড়কটিও বেহাল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর থেকে শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুর্গাপুর এলাকায় রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক খোকন চৌধুরী জানান, শাসনগাছা-ধর্মপুর সড়কটির অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নাজুক হয়ে আছে, শহরতলীর এ সড়কে স্বাভাবিক চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিনে-রাতে শত শত ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, জরুরি ভিত্তিতে সড়কের সংস্কার প্রয়োজন। জেলার লাকসামের মনপাল গ্রামের বয়স্ক নাগরিক আহসান উল্লাহ জানান, এই গ্রামের রামপুর-রাজাপুর সড়কটি গত ৭-৮ বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে, সহসা সংস্কার করা না হলে সড়কটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
এলজিইডি-কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কান্তি পাল জানান, গত বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। আরো কিছু প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হবে এবং সড়কগুলো সহসা সংস্কার করা গেলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক