• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফসলের সাথে এ কেমন শত্রুতা!

প্রকাশ:  ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫০ | আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫২
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রিন্ট

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় চাঁদা না পেয়ে এক সবজি চাষির দুই বিঘা জমির পটল ক্ষেত কেটে দিয়েছে দূর্বত্তরা। রোববার ভোর রাতে কলারোয়া উপজেলার খোর্দবাটরা গ্রামের চিহ্নিত এক সস্ত্রাসীর নেতৃত্বে দূর্বত্তরা এটা করেছে বলে পটল ক্ষেত মালিক জানিয়েছেন।

খোর্দবাটরা গ্রামের মৃত বদর উদ্দীন মোল্যার ছেলে কমিরম মোল্যা (৪৯) জানান, তিনি গত ২৫ বছর ধরে হাইব্রিড জাতের বেগুন, উচ্ছে, শসা, লালশাক, পটল, ওল, কচুসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে উন্নত জাতের সবজি চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন।

নিজের দুই বিঘাসহ প্রতিবেশীদের নিকট থেকে জমি বরগা নিয়ে তিনি নানা জাতের সবজির পাশাপাশি দুই বিঘা জমির উপর মাচা করে পটল চাষ করে সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালিয়ে আসছিলেন।

প্রতিবছর মৌসুমের শুরু থেকে একই গ্রামের নুবাত আলী শেখের ছেলে আরশাদ শেখ (৫০) তাকেসহ স্থানীয় সবজি চাষীদের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারিসহ মাঝে মাঝে টাকা পয়সা চাঁদা গ্রহণ করে আসছিলো। সহিংসতার একটি মামলা থাকায় বাড়ি ছেলে পালিয়ে থাকার কারনে সংসার চালানোসহ মামলার খরচ বহনে তাকে এ চাঁদা দিতে হবে, অন্যথায় ক্ষেতের সবজি কেটে নষ্ট করে দেয়ার হুমকিতে চাষীরা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি করিম মোল্যার স্ত্রীকে সে কুপ্রস্তাবও দেয়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে করিম মোল্যা আরশাদ শেখকে চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দেয়। এসময় আরশাদ করিমকে পথে বসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। শনিবার গভীর রাতে আরশাদ শেখ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কমির মোল্যার বাড়ির দক্ষিণ দিকের মাঠে মাচার উপর লাগানো প্রায় দুই বিঘা জমির পটল গাছের গোড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয়। পটল গাছগুলা শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে এলাকায় যাওয়ার পর গ্রামোসিরা জানায়, আরশাদ শেখ মামলার ভয়ে বাড়ি থাকতে না পেরে সবজি চাষিদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলো। এলাকার দুর্বল শ্রেণির কৃষককে তাদের মাঠের ফসল ক্ষতি করার হুমকি দিয়েই বছরের পর বছর এসব করে থাকে।

করিম মোল্যার স্ত্রী তাসলিমা খাতুন জানান, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হতো। বিভিন্ন সমিতি ও ব্যাংক থেকে লোন তুলে তারা এবছর সবজি মৌসুম শুরু করে। কয়েকদিন আগে আরশাদ শেখ তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলো। তার কথায় রাজি না হলে অনেক ক্ষতি হবে বলেও চাঁদাবাজ আরশাদ তাকে হুমকিও দেয়। এরই জের ধরে রাতে আরশাদসহ তার সাঙ্গ পাঙ্গরা এ ক্ষতি করেছে বলে তিনি দাবি করে বলেন বিষয়টি তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশ ফাঁড়িতে মৌখিক ভাবে অভিযোগও করেছেন।

খোর্দবাটরা গ্রামের জামির আলী, ইউছুপ মোল্যা, রোকেয়া খাতুন, আজিজ শেখসহ আরো অনেকেই জানান, আরশাদ শেখ এলাকার কৃষকসহ সবজি চাষিদের কাছে আতংকের নাম। তার কথার অবাধ্য হলেই সে মানুষের সীমাহীন ক্ষতি করে থাকে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আরশাদ মানুষের কাছ থেকে নিরবে চাঁদাবাজি করে আসছে।

এবিষয়ে জয়নগর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার জানান, করিম মোল্যা এলাকার সফল সবজি চাষি। দূর্বত্তরা রাতের আধারে তার প্রায় দুই বিঘা জমির পটল ক্ষেত কেটে দিয়ে ক্ষতি করেছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে থানা পুলিশের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আরশাদ শেখ বদমেজাজী লোক। অকারনেই মানুষের ক্ষতি করে। তাকে আটক করার জন্য তিনি পুলিশকে বলেছেন।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিল্পব কুমার নাথ জানান, এলাকায় নিরব চাঁদাবাজির কথা তাকে কেউ বলেনি। তবে সবজি ক্ষেত ধংসসহ চাষীদের নিকট চাঁদাবজি করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।