• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মহাদুর্ভোগে কুষ্টিয়ার ৪২কিলোমিটার মহাসড়ক

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:১৬
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
প্রিন্ট

মহাদুর্ভোগের অপর নাম কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়ক। যে সড়ক এখন যান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ৩২ জেলার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এই মহাসড়ক। যেখানে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ১১হাজার ভারী যানবাহন চলাচল করে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কই কিনা চলাচলের অনুপযোগী। পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে ভরা। ছোট বড় গর্ত, কোথাও কোথাও যেন খালে পরিনত হয়েছে। সড়ক সংস্কারে সড়ক বিভাগ নামমাত্র ব্যবস্থা নিলেও তা টিকেনা এক মাসও। সেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

সড়ক বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ৮বছরে এই সড়ক সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। তাছাড়া বছরে ৫০ লাখ টাকা করে ব্যয় করা হয়। গত এক মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যে কাজ হয়েছে তার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে সব কিছুই ধুয়ে-মুছে গেছে।

ব্যক্তিগত কাজে অটোরিক্সাযোগে বটতৈল চারমাইল এলাকায় যেতেই মেলে দুর্ভোগ কাকে বলে। মজমপুর গেট থেকে চারমাইল পর্যন্ত সড়ক যেন হাজারো খানাখন্দে ভরা। টানা বৃষ্টিতে খানাখন্দ যেন আরো জেগে উঠেছে। চৌড়হাস বিএটি কার্যালয় থেকে বটতৈল মোড় পর্যন্ত সড়ক যাচ্ছেতাই। মহাসড়ক হলেও তাকে মহাসড়ক বলাটা অসম্মানের হবে। কারণ মহাসড়ক কখনো খাল হতে পারে না। হাজারো খানাখন্দে আচ্ছাদিত হয়না। প্রশ্নও জাগলো। মহাসড়ক হলে তো সড়ক বিভাগ অন্তত ইট-বালি দিয়ে তা ভরাটের চেষ্টা করতো।

হ্যা’ এটাই বাস্তবতা। হাজার হাজার ভারি যানবাহনের যেখানে যাতায়াত সেই মহাসড়কের এমনই হাল। সড়ক বিভাগ এই সড়কটিতে মাঝে মধ্যে দায়সারা সংস্কার করলেও তা কোনো কাজে আসে না। বরং মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে যে কাজ করা হয় তা সামান্য পানিতেই ধুয়ে-মুছে যায়। ওই এলাকাতেও হয়েছে এমনই দশা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের এক কর্মকর্তারা জানান, ৮ বছরে ৪২ কিলোমিটারের এই সড়ক সংস্কারে ২০কোটি টাকার কাজ হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। বড় ধরণের কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিবছর টুকিটাকি কাজ হলেও বর্ষার সময় বৃষ্টিতে সড়ক ফেটে ভেঙে যায়। তবে এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তা না হলে সড়কটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

সওজ’র ওই কর্মকর্তা বলেন, সড়কটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন নকশার পরিবর্তন। তাতে ব্যয় হবে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। প্রতিবছর এমন কাজ করে কোনো লাভ নেই। একদিকে কাজ হবে অন্যদিকে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যাবে। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে বাড়বে দুর্ভোগ। কাজের কাজ কিছুই হবেনা। 

সড়কের এমন বেহাল দশায় কথা বলতেও যেন বিরক্ত হন ভুক্তভোগীরা। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী এসবি সুপার ডিলাক্সের চালক ইমরান হোসেন জানান সড়কের বেহাল দশার কারনে আগে যেখানে ঢাকা যেতে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সময় লাগতো ৬ ঘণ্টা। সেখানে এখন লেগে যাচ্ছে ১২ঘণ্টা। দ্বিগুন সময় লেগে যাচ্ছে। এতে কোটি  টাকার বাসের অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে। মাঝে মধ্যেই বিকল হচ্ছে। এরফলে মালিকের মোটা অংকের অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে।

শুধু বাসই নয়, প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ভেঙে চুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী পরিবহন। এতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক সংস্কার না হলে এমন দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

ট্রাকচালক বাদশাহ আলমগীর বলেন, ট্রিপ নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুনেরও বেশি সময় লাগছে। ভাঙা সড়ক অতিক্রম করতে মাঝে মধ্যেই স্প্রিং ভেঙে পড়ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তা মেরামত করতে হচ্ছে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিক, ফ্রেশঅ্যাগ্রো’র স্বত্বআধিকারী ওমর ফারুক জানান, প্রতিদিন প্রায় ২০ট্রাক চাল তার মিল থেকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না চাল। মাঝে মধ্যেই চালভর্তি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। সময়মত চাল সরবরাহ করতে না পারায় চালের বাজারেও প্রভাব পড়ে।  

সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক রফিকুল আলম টুকু মনে করেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই সড়কের এমন হাল হচ্ছে। বরাদ্দের শতভাগ বাস্তবায়ন হলে সড়কের এমন করুন দশা হতো না। আমি মনে করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কুষ্টিয়ার আহ্বায়ক কে এম জাহিদ বলেন, সড়ক সংস্কারে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিয়ে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে কোনো লাভ নেই। সম্প্রতি সড়কের বেহাল দশার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে প্রাণহানির মত ঘটনা। চলাচলের উপযোগী হলে দুর্ঘটনাও কমে আসবে।

কুষ্টিয়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সড়কের দুই ফিট নিচের অংশ (বেড) পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে তৈরি করে আবার ওভার লে করলে ঠিক হয়ে যাবে। অন্যথায় এভাবেই চলতে হবে। তবে সড়ক সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

এসএম

সর্বাধিক পঠিত