• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পুরুষ শূন্য গ্রামে রাতে যুবতী মেয়েদের ওপর নির্যাতন

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৪৫
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শিমুলিয়া এলাকায় গাছকাটাকে কেন্দ্র করে মাসাদ মিয়া নিহতের ঘটনায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে ওই গ্রামের অধিকাংশ পরিবার। ফলে ২৬ দিন ধরে মুসল্লি নেই স্থানীয় মসজিদে। এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতষ্ক বিরাজ করছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে আরোও বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আর এই সুযোগে মামলার বাদী পক্ষের লোকজন বিবাদীদের বাড়ি থেকে মহিলাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার এবং রাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে যুবতী মেয়ে ও মহিলাদেরকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, বর্তমান মেম্বার মোশাহিদ মিয়া ও তার ভাই দরবেশ মিয়া এবং রাজা মিয়া গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে মাসাদ মিয়া (২৮) নামে এক যুবক নিহত হন। ওই ঘটনার পরের দিন মৌলভীবাজার মডেল থানায় নিহত মাসাদ মিয়ার বড় ভাই শিবলী মিয়া বাদী হয়ে ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০৯)।

মামলার পর থেকে আসামি পক্ষের প্রায় ১৬০ জন পুরুষ গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে থাকলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মশাহিদ মিয়ার বাহিনী পুরুষ শূন্য বাড়ি গুলোতে অভিযান চালিয়ে তাদের ঘর-বাড়িতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফিসারীর মাছ, নৌকা, ক্ষেতের জমির ধান, স্বর্ণা লষ্কার লুট করে নেওয়ার অভিযোগ করছেন ভোক্তভুগীরা।

নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে থাকা মহিলারা মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না আবার নিজের চোখের সামনে আপন মেয়ের প্রতি এমন নির্যাতন সহ্যও করতে পারছেন না।

তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি একাধিকবার অবগত করলেও তিনি লুটপাট বন্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

সরেজমিন এলাকায় গেলে আসামি পক্ষের মহিলারা বলেন, বুধবার রাতে বাদী পক্ষের লোক আসামি আবু বক্কর মিয়ার ঘরের দরজা ভেঙ্গে আসবাবপত্র, গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, ২টি সেচের মেশিন এবং ৩টি পুকুরের মাছ লুট করে, খাজা মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়ার বিয়ের সকল মালামাল এবং ২টি মাছ ধরার জাল, কাদু মিয়ার স্ত্রী রশিদা বেগমের বসত ঘরে রাতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে যুবতী মেয়েকে নির্যাতন করে প্রতিপক্ষ আবাস মিয়ার ছেলে মখলিছ এবং সে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটির কানের দুলও নিয়ে যায়। মসজিদের পাশের সেলোয়ারা বেগমের নির্মানাধীন ইটের তৈরি ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে বাদীরা।

এসময় করিমা বেগম বলেন, বাদী পক্ষের লোকেরা ২০ হাজার টাকার জাল, ২টি নৌকা, ২টি ছাগল ও ৬টা হাঁস লুট করে নিয়ে গেছে।

এছাড়াও সাবেক ইউপি সদস্য দেলওয়ার হোসেন, আমির মিয়া, সাবু মিয়া, কমরুন বেগম, রনি বেগম, পারবিন বেগম, আবিদ মিয়া, সায়রা বেগম ও রোনা বেগম এর ঘর থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন তারা।

এবিষয়ে মামলার বাদী শিবলী মিয়া বলেন, লুটপাটের কোনো ঘটনার সাথে আমাদের পক্ষের লোক জড়িত নয়।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, আসামি পক্ষের দু-একজন এসে মালামাল লুটের মৌখিক অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কে বা কারা নিয়েছে এটা তারা বলতে পারেনি। তবে বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মো. সোহেল আহমদ বলেন, লুটপাটের ঘটনা শুনে তদন্তে আমাদের ফোর্স পাঠালে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়েনে শিমুলিয়া গ্রামের সুমন মিয়ার সাথে প্রতিবেশী বকুল মিয়ার গাছ কাটা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এর সূত্র ধরে বর্তমান মেম্বার মোশাহিদ ও রাজা মিয়া গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র, তীর নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বর্তমান মেম্বার মোশাহিদের পক্ষের মাসাদ নামে একজনের গলায় তীরের আঘাত লাগলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের আরো ১০ জন আহত হন।