মায়ের সমালোচনাকারীদের কাছে সামিয়া রহমানের ছেলের যত প্রশ্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে ‘লেখাচুরি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে তাঁর ছেলে রাশাদ হোসাইন। বুধবার বিকেলে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে রাশাদ দাবি করে, তাঁর মায়ের ওপর আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিছু না জেনেই লোকজন অন্ধভাবে সমালোচনা করছে।
ইংরেজি ভাষায় দেওয়া স্ট্যাটাসটিতে রাশাদ লিখেছে, ‘গত কিছুদিন ধরে আমার মা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান অন্য কারো লেখাচুরির অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি বলবো, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ ছাড়া্ আর কিছু নয়।’
নিজের দীর্ঘ স্ট্যাটাসটি সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে রাশাদ লিখেছে, ‘ঢাকা ট্রিবিউনে প্রথম খবরটি প্রকাশিত হয়। আরো কিছু সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করলে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লোকজন আমার মায়ের সমালোচনা করতে থাকে। এই অবস্থানে পৌঁছাতে তাঁর ২০ বছরের বেশি সময়ের কঠোর পরিশ্রম, পুরো পরিবারের দিকে কালি ছুড়তে শুরু করে। আসলে কী ঘটেছে, তার বিন্দুমাত্র না জেনেই লোকে অন্ধভাবে মায়ের সমালোচনা করছে।’
রাশাদ লিখেছে, ‘এই ঘটনার শুরু এক অথবা দুই বছর আগে। আমার মায়ের একজন ছাত্র সৈয়দ মারজান (এ ঘটনার খলনায়ক) যৌথভাবে একটি নিবন্ধ লেখার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে সায় দিলেও পরে মারজানের লেখার ধরন ও দৃষ্টিভঙ্গি তিনি পছন্দ করছিলেন না। ওই নিবন্ধ লেখা থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। এক বছর কেটে যায়। এরপর ঘটে বাজে ঘটনাটি। বইয়ের লেখা থেকে লোকজন খুঁজে বের করে, অন্য কিছু জার্নাল থেকে প্রচুর রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে। এরপরই অন্যের লেখা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে লোকজন মাকে ফোন করতে শুরু করে। ঢাকা ট্রিবিউন এ নিয়ে রিপোর্ট করে। মারজানের পরিচয়ে থাকা শয়তান তাৎক্ষণিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে। সবাইকে বলতে থাকে, নিবন্ধটির মূল লেখক সামিয়া, আর সে শুধু সামিয়ার আদেশ পালন করেছে। আমি নিশ্চিত, বই প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের নাম ব্যবহার করা অপরাধ। আমার মা দয়ালু ছিলেন বলেই তার নামে মামলা করেনি। সত্যি বলতে, মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মারজান প্রত্যেক সাংবাদিকদের বলছে, সব দোষ সামিয়ার। প্রায় সবাই আমার মায়ের বিরুদ্ধে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, অনেক সাংবাদিক, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কেউই তাঁর পাশে নাই। এর কারণ একটাই—অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। কঠোর পরিশ্রম ও নিজের ব্যক্তিগত সময় ব্যয় করে তিনি যে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তা ধ্বংস হয়ে গেছে।
রাশাদ লিখেছে, ‘আমার মা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন। অতি সংবেদনশীল মানুষ হয়েও তিনি এসব সংবাদের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাননি। লোকজন উল্টো অন্ধভাবে আমার মায়ের সমালোচনা করতে থাকে। এমনভাবে প্রচারনা করেতে থাকে যেন মা তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে কেবল প্রতারনাই করে গেছেন। এটা খুবই বাজে পরিস্থিতি। দুশ্চিন্তা করার বদলে ছেলের ফেসবুকে লেখা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। তবে ব্যাপারটা এমন নয়। এ ঘটনা আমার জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে বলেই লিখছি। আমাদের পরিবার খুব দুঃসহ সময়ে আছে, মায়ের জীবন দুর্বিসহ। আর সবই হয়েছে কেবল একটি মানুষের জন্য।
রাশাদ জানায়, সংবাদ সম্মেলন অথবা আদালতে সব খুলে বলা হবে। সেটা খুব দ্রুত অথবা দেরিতে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সব কিছু থাকার পরও তাঁর মা এসব চালিয়ে যাবার ইচ্ছাশক্তিটুকুও পাচ্ছেন না। এর কারণ ফেসবুক পোস্ট। মায়ের প্রতি ঘৃণাকারীদের প্রতি রাশাদের প্রশ্ন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন সাংবাদিক, যার বই অ্যামাজনের মতো ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে আছে, তিনি স্থানীয় একটি জার্নালের প্রকাশের জন্য কি অন্যের লেখা চুরি করবেন?
ঘৃণাকারীদের উদ্দেশে রাশাদ লিখেছে, কেবল ঈর্ষা থেকে তাঁর মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে। তাঁর মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রী ছিলেন। দুবার স্বর্ণপদক জিতেছেন। নিউজটোয়েন্টিফোরবিডিতে শীর্ষপদে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল ধরে অধ্যাপনা করছেন। গত দু্ই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি তিলে তিলে নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এখনও কর্মজীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য নিত্য পরিশ্রম করছেন। এর পরও ঘৃণাকারীরা ঘৃণা করবেই। কারণ এতেই তারা সুখ খুঁজে পায়।
মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে রাশাদ লিখেছে, ‘দয়া করে সত্যি কথাটা আপনার আত্মীয়-স্বজনের কাছে ছড়িয়ে দিন। যেন তাঁরা আত্মবিশ্বাস পান, শত্রুদের মোকাবিলা করতে পারেন। আমার মায়ের ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে। কিছু লোক কিছুতেই তাদের ধারনা বদলাবে না। সমালোচনা করবেই। এর কারণ, একজন নারী মিডিয়ায় এতটা সম্মানজনক পদে আছেন। সবার প্রতি অনেুরোধ, ঘটনাটি আপনাদের আত্মীয়-স্বজনকে জানান। এতটা পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের নামে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’-এর ডিসেম্বর সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ওই প্রবন্ধের বিরুদ্ধে ‘চৌর্যবৃত্তি’র অভিযোগ এনেছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
শিকাগো প্রেসের অভিযোগ, প্রবন্ধের সিংহভাগ নেওয়া হয়েছে প্রখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকোর প্রবন্ধ ‘The Subject and Power’ থেকে। ১৯৮২ সালে তা শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশক ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। গবেষণায় ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে সম্প্রতি দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।