বাসর রাতেই স্ত্রীকে তালাক!
পরিণত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অনেক তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন থাকে। সামাজিকভাবে বিয়ে হলে বর ও কনের ব্যক্তিগত তথ্য অনেক সময় স্পষ্ট থাকে না। বিয়ের পরে জানতে পারেন একে অপরকে। তবে বর কিংবা কনের বিষয়ে যদি আপত্তিকর কোনো তথ্য বিয়ের পর জানাজানি হয় তখনই ঘটে বিপত্তি। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর সকদি রামপুর গ্রামে।
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার রিফিউজি কলোনীর মমিন মিয়া নামে যুবকের বিয়ের পর বাসর রাতেই জানলেন স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। রাতেই স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে স্ত্রীকে তালাক দেয় সে। এই ঘটনার পর কনের বাবাসহ পুরো পরিবার গা ঢাকা দিয়েছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর সকদিরামপুর গ্রামের কৈ বাড়িতে বিয়ে হয় মমিন ও স্মৃতি নামের এক মেয়ের। তবে বিষয়টি বিয়ের পর জানাজানি হয়।
৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে বিয়ে এবং বিচ্ছেদের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোঃ সেলিম।
তিনি বলেন, মেয়ের বাবা শফিক মিজি একজন দিনমজুর। তার ৪ মেয়ে। এই মেয়ে তৃতীয়। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট আরও একজন মেয়ে আছে। স্মৃতির পুরাণবাজারে বিয়ে হয়েছে জানতে পেরেছি। এরপর মেয়ের বাবা আমাকে গত ক’দিন আগে বাজারে যাওয়ার পথে জানিয়েছেন তার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তখন তিনি তার বাড়ির লিটন নামে এক যুবকের নাম বলেন। এসব বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানকে অবগত করতে এবং আইনী ব্যবস্থাগ্রহণের পরামর্শ দেই।
অন্তঃসত্ত্বা স্মৃতির বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ওই পরিবারের লোকজন বহুদিন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত। তাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যে বললে উল্টো অপবাদ দেয়। তাদের এহেন কাণ্ডে বাড়ির অন্য পরিবারগুলোর সম্মানহানি হয়। বাড়ির নারী-পুরুষ সকলেই ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত যুবকদের এবং স্মৃতির পরিবারের আইনানুগ শাস্তি কামনা করেন। তারা বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
অন্তঃসত্ত্বা স্মৃতি ঘটনার পর গণমাধ্যমকে বলেন, গত এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ওই বাড়ির লিটন, ইলিয়াছ মাস্টার, শিমুল ও এলাকার রনি নামে যুবকরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। যে কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এদিকে বর মমিনের মা ছালেহা বেগম জানান, তার ছেলে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করে। ছেলের বিয়ের পূর্বে এমন কোনো তথ্যই তাদের জানা ছিলো না। বিয়ের রাতে ছেলের বউয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে তারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। পরে রাতেই তাকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বা নিশ্চিত হন। ওই রাতেই ছেলে ওই মেয়েকে তালাক দেয়। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও পরীক্ষা করা হয় এবং সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট পান ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে মেয়ের পরিবার এসে তাকে ওইদিনই নিয়ে যায়।
এদিকে স্মৃতিকে বাড়িতে আনার পর লোকজনের মধ্যে সামালোচনা শুরু হয় এবং বাইরের লোকজন এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে চায়। এক পর্যায়ে বাড়ির লোকজন তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলে। যে কারণে স্মৃতি ও তার পরিবারের সদস্যরা গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে চলে যায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন স্বপন মিয়াজী জানান, এ ধরণের ঘটনার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি লোকমুখে শুনেছি। মেয়ের বাবা দিনমজুর ও বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্ষণের বিষয়ে যাদের নাম বলেছে তারা অনেকটা বখাটে ধরনের। কিন্তু ধর্ষণে জাড়িত আছে কিনা বলতে পারব না।