• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নাশকতা ও সরকার পতনের ছক কষে নেমেছে জামায়াত

প্রকাশ:  ১১ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৩৫ | আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নাশকতা ও সহিংসতার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে ছক কষে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের উচ্চ আদালতে ফাঁসির রায় যাতে বহাল না থাকে সেজন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন জামায়াত-শিবির নেতারা। 

এ ছাড়াও রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-শিবির। জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড এনেছে পুলিশ। নাশকতা ও সহিংসতার নীলনক্সা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াত-শিবির জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কানেকশন গড়ে তুলেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে দেশজুড়ে নাশকতা ও সহিংসতা করতে বলে আশঙ্কা প্রকাশের পর সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলো সংগঠিত হয়ে দেশজুড়ে নাশকতা ও সহিংসতা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করার পর জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী গোষ্ঠী বিরোধী অভিযানে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নং রোডের ৩ নং বাড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমানসহ ৯ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জামায়াতের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডাঃ রিদওয়ানুল্লাহ শাহেদি আমিরে জামায়াতসহ ৯ জনকে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তারা আটক হয়েছেন। গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন তো দূরের কথা কোন নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও হুজিসহ দেশী-বিদেশী একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের গোপন যোগসাজশ করে দেশের নাশকতা ও সহিংসতা চেষ্টার ছক কষা করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর দলের বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীতে এসব জঙ্গী সংগঠনের নেতারাই মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিশে তারা বিভিন্ন নাশকতায় অংশ নিচ্ছে।  উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের জঙ্গী কানেকশন খতিয়ে দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরের হাত ধরে জঙ্গী উত্থান ও আস্ফালনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত আট বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য তৎপরতা বন্ধ থাকলেও তারা চুপসে যায়নি। নাম-পরিচয় বদলে নানা কায়দায় তারা সরব হওয়ার চেষ্টা করছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলার সঙ্গেও শিবিরের দুজন সংগঠকের নাম উঠে আসে। তাদের মধ্যে একজন গুলশান হামলার সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান (পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত)। সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাথী ও ক্যাডার ছিল। যশোর শহরে আত্মসর্মপণ করা নারী জঙ্গী খাদিজাও হচ্ছে মারজানের বোন। বোনের স্বামী জঙ্গী নেতা হাদিসউর রহমান সাগর এখনও পলাতক।

গোয়েন্দা তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী আত্মঘাতী সাত জঙ্গীর মগজ ধোলাইয়ের প্রশিক্ষক রায়হান কবির ওরফে তারেক আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিংয়ে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। এর বাইরে নব্য জেএমবির আরো চার দুর্ধর্ষ জঙ্গীর শিবির কানেকশনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। একজন রয়েছে কারাগারে। নব্য জেএমবিতে শিবিরের আরো অনেক সাবেক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামের ‘জঙ্গী আস্তানায়’ পরিচালিত অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’ চলাকালে নিজেদের বোমা বিস্ফোরণে নিহত রফিকুল ইসলাম আবু ওরফে আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু শ্বশুর বাড়ির লোকদের দ্বারা জঙ্গী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন জামায়াত-শিবিরের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও শিশু মেয়ে নুরিকে।

গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, সাভারে দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি, গাবতলী ও আশুলিয়ার চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা এবং পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে শিয়া মসজিদে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুর্ধর্ষ জঙ্গী আলবানী ওরফে হোজ্জা ওরফে শাহাদত ওরফে মাহফুজও আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এই দুর্ধর্ষ জঙ্গী গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। সে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার ছিল। গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টে হামলার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার মাসুদ রানাও বগুড়ায় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০১৫ সালের শেষ দিকে রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী হামলাকারী তারেক আজিজ এবং তার সহযোগী জামালউদ্দিনও শিবিরের রাজনীতি করত। হামলার সময় তারেক এবং পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামালউদ্দিন মারা যায়।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ভারপ্রাপ্ত আমির ইয়াহিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, আর্থিক সঙ্কট ও দলীয় বিবাদের কারণে তাদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছে ধর্মভিত্তিক জামায়াত-শিবিরে। গোয়েন্দা সংস্থার পাওয়া তথ্যানুযায়ী জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের জামায়াত-শিবির সারাদেশে ব্যাপক তা-ব চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দারা তা আগেভাগে জেনে ফেলায় তাদের সে পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়। সারাদেশে জঙ্গী হামলার সঙ্গে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের বিরোধী পক্ষ জড়িত, যাদেও সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। জেএমবির এই অংশটিকেই বলা হচ্ছে নব্য জেএমবি। এই অংশে শিবিরের অনেক সাবেক নেতাকর্মী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। হামলার পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কানেকশন রয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে লিঙ্ককআপ গড়ে তুলেছে এমন একটি তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই তালিকায় আছে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ ইসলাম রক্ষা কমিটি, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী দল, বিশ্ব ইসলামিক ফ্রন্ট, ছাত্র জামায়াত, দাওয়াতে ইসলাম, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আরাকান, হিযবুত তাহরীর, হিযবা আবু ওমর, হিযবুল মাহাদী, এবতাদাতুল আল মুসলামিন, এহসার বাহিনী, ফারইস্ট ইসলামী, হরকাতে ইসলাম আল জিহাদ, হরকাতুল জিহাদ, হায়াতুল ইগাছা, আফগান পরিষদ, আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস যুব সংঘ, আহলে হাদিস তাবলিগ ইসলাম, আহসাব বাহিনী, আল হারামাইন, আল ইসলাম মার্টিয়াস ব্রিগেড, আল ইসলাম সংহতি পরিষদ, আলজাজিরা, আল জিহাদ বাংলাদেশ, আল খেদমত, আল মার্কাজুল আল ইসলামী, আল মুজাহিদ, আল-কায়েদা, আল সৈয়দ মুজাহিদ বাহিনী, আল তানজিব, আল্লাহর দল, আল্লাহর দল ব্রিগেড, আমানাতুল ফোকান আল খাইরিয়া, আমিরাতে দ্বীন, আঞ্জুমানে তালামিজা ইসলামিয়া, আরাকান আর্মি, আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট, আরাকান লিবারেশন পার্টি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্ট, হেফাজতে খতমে নবুওয়ত, হিযবুল্লাহ আদলে বাংলাদেশ, হিযবুল্লাহ ইসলামী সমাজ ও জামা’আতুল ফালিয়া, জামায়াতে মোদাচ্ছেরীন বাংলাদেশ, জামায়াতে তুলবা, জামায়াতে আহিয়া, জামায়াতে ফালিয়া, জামাতুল ইসলাম মুজাহিদ, জামায়াতে আহলে হাদিস, জামায়াতে ইসলামী সলিডারিটি ফ্রন্ট, জামায়াতুল আহিয়া উত-তুরাজ, ও খতমে নবুওয়ত।

জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড:

জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮ জনের পৃথক দুই মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মঙ্গলবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী রিমান্ডের আদেশ দেন । রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া অপর ৭ আসামি হচ্ছেন, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর আমির মোহাম্মদ শাজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার আমির জাফর সাদেক, সেক্রেটারি জেনারেলের ব্যক্তিগত সহকারী নজরুল ইসলাম ও মো. সাইফুল ইসলাম। এর আগে অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ সাজু মিঞা প্রত্যেক মামলায় আসামিদের ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। জনকণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত