• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জের হাজী ইসমাইলের খোঁজ মিলছে না

চকবাজার ট্র্যাজেডিতে হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জের নিহত ২ জনের দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ:  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গত বুধবার রাজধানীর চকবাজারে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ঘটনায় লাশের মিছিলে যোগ হওয়া হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জের ২ জনের দাফন গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। একই ঘটনায় সেখানকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজীগঞ্জের আলহাজ¦ ইসমাইল (৬৫) এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। হাজী ইসমাইল উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের আহম্মদপুর গ্রামের ছয়আনি বাড়ির মৃত হাজী ইসহাকের ছেলে। ইসমাইল ছোটবেলা থেকে চকবাজারে ব্যবসা করে আসছিলেন। নিহতরা হলেন হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের কাজিম উদ্দিন বেপারী বাড়ির কাজী আবুল হোসাইনের ছেলে কাজী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক (২৭) ও ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও গ্রামের শামছুল হক বেপারী (৬২)। নিহত দু’জনকে স্ব স্ব বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে ইতিমধ্যে দাফন করা হয়েছে। এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের অনুদান শুক্রবার নিহতদের পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
    ফরিদগঞ্জের নিহত শামছুল হকের ভাতিজা রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে চকবাজার চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে অগ্নিকা-ের ঘটনার পর পরিবারের লোকজন চাচার মোবাইল ফোনে কল করলেও কেউ রিসিভ করেনি। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে চাচার মুখের দাঁড়ি ও হাতে থাকা ঘড়ি দেখে লাশ সনাক্ত করেন তার ছেলে মাহবুব ও ভাতিজা কবির। ভয়াবহ এ অগ্নিকা-ে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ মালামাল পুড়ে যাওয়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। শুক্রবার সকালে নিহতের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ঈদগাহে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
    শামছুল হক বেপারীর দীর্ঘদিনের সহচর কিরণ পাটওয়ারী জানান, চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে আল মদিনা ডেকোরেটরের মালিক শামছুল হক বেপারী (৬২) বুধবার রাতে বিয়ের একটি অনুষ্ঠানের জন্যে কাপড় প্রস্তুত করছিলেন। দু’জন সহযোগীকে নিয়ে কাজ করা অবস্থায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে আগুনে পুড়ে অন্যের সাথে শামছুল হকও অঙ্গার হয়ে যান। ১৯৮৫ সাল থেকে চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে ওয়াহিদ মার্কেটের নিচতলায় ডেকোরেটরের ব্যবসা করতেন শামছুল হক। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ছেলে মাহবুব এবং মেয়ে পারভীন ও নিপাকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জে থাকতেন তিনি।
    হাজীগঞ্জের নিহত সিদ্দিকের বাবা কাজী আবুল হোসাইন জানান, চকবাজারের ছোট ব্যবসায়ী তার ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। আগুন লাগার ঘটনা টিভির মাধ্যমে খবর পেয়ে ছেলের খোঁজ করে ব্যর্থ হই। পরে ঢাকায় বসবাসকারী আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে লাশ সনাক্ত করেন। অবিবাহিত সিদ্দিক ৩ ভাই, ২ বোনের সবার বড়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সিদ্দিকের লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছে। রাত আনুমানিক ১১টার জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
    এদিকে চকবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অগ্নিকা-ের পর থেকে নিখোঁজ হাজীগঞ্জের আহম্মদপুর গ্রামের হাজী ইসমাইলকে (৬৫)কে আহত কিংবা নিহত কোনোভাবেই খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার। ইসমাইলের পরিবার তার শরীরের একটি বিশেষ চিহ্ন পায়ের জোড়া লাগা আঙ্গুলের চিহ্ন দেখে খোঁজেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ইসমাইলের পায়ের দুটি আঙ্গুল জন্মগতভাবে জোড়া লাগানো ছিলো।
    ঢাকায় বসবাসরত আহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইউনুস চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, গত দুদিন থেকে হাজী ইসমাইলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ সনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই লাশের হদিস মিলছে না। শেষপর্যন্ত মনে হচ্ছে ডিএনএ-এর মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে হবে।  
    ইসমাইলের চাচা আবুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে তিনি বড়। গরিব পরিবারের সন্তান হাজী ইসমাইল স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এসএসসি পাস করে পালিয়ে যান ঢাকায়।  সেখানে গিয়ে ঢাকার বক্শীবাজারের বুলবুল হাজী নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওই দোকানে তিনি চাকুরি করেন। সে থেকে দিনে দিনে তিনি হয়ে পড়েন দুটি ফ্যাক্টরির মালিক। চকবাজারেও তার একটি প্লাস্টিকের দোকান ছিলো। ঘটনার সময় ওই প্রতিষ্ঠানেই তিনি বসা অবস্থায় ছিলেন। জীবদ্দশায় ইসমাইল সাতবার পবিত্র হজ¦ পালন করেছেন। এ এলাকায় তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দানশীল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে স্ত্রীসহ এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তার।
    এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের নির্দেশে হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদ হয় গ্রামের নিহত সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক অনুদান ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিহতের পরিবারের কাছে এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী আফরোজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত শামছুল হকের পরিবারের কাছে নগদ অর্থ তুলে দেন।