• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের মাধ্যমিক পর্যায়ে অভিযাত্রা-২ পর্ব

বর্তমানে এ কথা প্রমাণিত যে সকল ক্ষেত্রে কথা বলা জানা লোকের কদর অনেক বেশি : জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফি উদ্দীন

মাধ্যমিকে শীর্ষ দশ দলের বিজয় উল্লাস ॥ ৮ দলের অশ্রুসিক্ত বিদায়

প্রকাশ:  ১৯ মার্চ ২০১৯, ১৩:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ঘড়িতে তখন সময় ১টা ৪৫ মিনিট। দীর্ঘ আলোচনা সভার পর অনুষ্ঠান সঞ্চালক বললেন এবারে ফলাফল ঘোষণার পালা। মুহূর্তেই চাঁদপুর রোটারী ভবনস্থ ডাঃ নূরুর রহমান কনফারেন্স হলে নেমে আসলো নীরবতা। ‘কারা যাচ্ছে সেরা দশে?’ সে সংবাদটি শোনার প্রতীক্ষায় হল ভর্তি দর্শক। হাত জোড় করে ¯্রষ্টার নিকট প্রার্থনারত অবস্থায় একাধিক দল। কেউ কেউ মাথা নিচু করে কান্না করছিল। এ যেন এক অন্তিম মুহূর্ত। দলতো বটেই কোনো দলের সমর্থকদের মধ্যেও নেই বিন্দুমাত্র উচ্ছ্বাস। বলছিলাম একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার অভিযাত্রা-২ পর্বের ফলাফল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তের কথা। এ পর্বের ২০টি দলের মধ্যে এতোটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিতর্ক হয়েছে যে, কোনো দলই নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেনি তারা জয়ী হবে। জেলার শীর্ষ বিতর্ক দল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নবাগত বিতর্ক দলটি পর্যন্ত সকলের মধ্যে একই দুশ্চিন্তার ছাপ ছিলো। অবশেষে প্রাণবন্ত এ বিতর্ক পর্বটির ফলাফল ঘোষণা করেন চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে। দুটি বিতর্ক দল অনুপস্থিত থাকায় দুটি বিতর্ক একপাক্ষিক হয়। ‘দিনের আটটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার মধ্যে তিনটি বিতর্কেরই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্ট!’ এমন তথ্য পেতেই বিতার্কিকদের মধ্য থেকে ভেসে আসলো স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ। মাত্র ১ পয়েন্টে জেলার সর্ববৃহৎ বিতর্ক টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়াটি যে তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার মত ঘটনা। অবশেষে বিজয়ী সেরা ১০টি দলের বিজয় উল্লাস আর হেরে যাওয়া আটটি দলের কান্নায় এক ভিন্ন রকম পরিবেশ তৈরি হয় উক্ত হলরুমে।
    গতকাল ১৮ মার্চ সোমবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমিক পর্যায়ের অভিযাত্রা-২ পর্ব। টানা ৫ ঘন্টা বিরতিহীন ১০টি বিতর্কের পর দুপুর সোয়া ১টায় শুরু হয় পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফি উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল হক। চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের চাঁদপুর সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমানের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, সিকেডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত।
    আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফি উদ্দীন বলেন, বিতর্ক চর্চার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে এটি সরকারের একটি অবধারিত সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশে পরিণত হয়েছে। সরকারের যতগুলো উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রয়েছে তাতে বিতর্ককে সংযুক্ত করা হচ্ছে। কারণ বর্তমানে এ কথা প্রমাণিত যে সকল ক্ষেত্রে কথা বলা জানা লোকের কদর অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের কথা বলার জন্যে বিতর্ক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিটি স্কুলে কথা বলা শেখাতে অর্থাৎ বিতর্ক শেখানোর জন্যে পৃথক একজন শিক্ষক প্রয়োজন। তবেই তৃণমূল থেকে আরও অনেক বিতার্কিক বেরিয়ে আসবে।
    এর পূর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিকেডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী শাহাদাত ঘোষণা করেন বিতার্কিকদের সাথে নিয়ে অচিরেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে যেন দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক সহ বাচিক শিল্পের সকল বিষয়ে পাঠদানে ও প্রশিক্ষণ প্রদানে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের জন্যে সৃষ্ট পদ চালু করা হয়। তবেই বিতর্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিতর্ক নিয়ে, বিতার্কিকদের নিয়ে ¯্রােতের প্রতিকূলে আর সংগ্রাম করতে হবে না।
    উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্কের এ পর্বটিতে দিনের প্রথম বিতর্কে ফরিদগঞ্জ কালিরবাজার মিজানুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়কে মাত্র মাত্র ১ পয়েন্টে পরাজিত করে বিজয়ী হয় হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৮২.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান সামিয়া ইসলাম। দিনের ২য় বিতর্কে হাইমচর আদর্শ শিশু নিকেতনকে মাত্র ১ পয়েন্টে হারায় হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান আশফাক হোসেন নূর তরী। দিনের ৩য় বিতর্কে রহিমানগর বিএবি উচ্চ বিদ্যালয়কে ৪৮ পয়েন্টে হারিয়ে সহজ জয় পায় মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। যদিও বিলম্বে উপস্থিতির দায়ে দলটির প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তন করা হয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৮৩.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান সালমা আক্তার নিপা। দিনের ৪র্থ বিতর্কে গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে মাত্র ৭ পয়েন্টে হারায় হামানকর্দি পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৯ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান নুসরাত রুবাইয়া (অর্চি)। ৫ম বিতর্কে সাবেক দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দল ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে ৫.৫ পয়েন্টে হারিয়েছে শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৯.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান ফাইজা আফরোজ প্রমি। ৬ষ্ঠ বিতর্কে কচুয়ার ভূঁইয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়কে ২৬ পয়েন্টে হারিয়ে সহজ জয় পায় বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের হাই স্কুল শাখা। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৮১.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের দ্বিতীয় বক্তা শামীমা আক্তার। ৭ম বিতর্কে বাজাপ্তি রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়কে মাত্র ১ পয়েন্টে হারায় পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়। যদিও নম্বরের ব্যবধানে বাজাপ্তি রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় ৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলো, কিন্তু বিলম্বে উপস্থিতির দায়ে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তন করায় ১ পয়েন্টে হেরে বিদায় নিতে হয় বাজাপ্তি রমনী মোহনকে উচ্চ বিদ্যালয়কে। পরাজিত হলেও এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৭.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজিত দলের দলপ্রধান সাজেদা আক্তার লিমা। ৮ম বিতর্কে কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়কে ১২.৫ পয়েন্টে হারায় ফরিদগঞ্জ বালিথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৯.৫ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান মারিয়া আক্তার মীম। দিনের ৭ম বিতর্কে প্রতিপক্ষ হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ স্কুল শাখা অনুপস্থিত থাকায় এক পাক্ষিক বিতর্কে ২০৭ পয়েন্ট পেয়ে অগ্রযাত্রা পর্বে সরাসরি উঠে যায় ফরিদগঞ্জ শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখা। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৫ পয়েণ্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের প্রথম বক্তা ইফফাত হাসান অমি এবং ১০ম বিতর্কে প্রতিপক্ষ মতলব উত্তরের লুধুয়া স্কুল এন্ড কলেজ স্কুল শাখা অনুপস্থিত থাকায় একপাক্ষিক বিতর্কে ২২৫.৫ পয়েন্ট পেয়ে অগ্রযাত্রা পর্বে উঠে যায় হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এ পর্বে ব্যক্তিগত ৭৮ পয়েন্ট পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় বিজয়ী দলের দলপ্রধান আনন্দ লোধ।
    অভিযাত্র-২ পর্বে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী, বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ও সিকেডিএফ চাঁদপুর সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান, সিকেডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, সিকেডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে, চাঁদপুর ইনার হুইল ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুক্তা পীযূষ, তারুণ্যের অগ্রদূত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র বিতার্কিক ভিভিয়ান ঘোষ। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন সিকেডিএফ-এর সদস্য কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন, সিকেডিএফ চাঁদপুর সদর শাখা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জায়েদুর রহমান নিরব, বিতার্কিক রাবেয়া আক্তার, রতœা আক্তার ও সিকেডিএফ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুস সাকিব। উল্লেখ্য, আগামী ২৩ মার্চ অগ্রযাত্রা অর্থাৎ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে মুখোমুখি হবে অভিযাত্রা-২ পর্বের বিজয়ী ১০টি দল। চাঁদপুর রোটারী ভবনে সকাল ৯টায় এই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।    

 

 

সর্বাধিক পঠিত