• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ:  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। দলটির অনেকে মনে করেন এই উদ্যোগের সঙ্গে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টারও যোগসূত্র থাকতে পারে। এছাড়া এ উদ্যোগের পেছনে কারা তা নিয়েও নানা সন্দেহ ও আলোচনার দানা বেঁধে উঠেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হুট করে ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এই আলোচনায় কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। এগুলো হলো ছাত্রদের বাইরে থেকে কেউ উসকানি দিচ্ছে কি না এবং ঘোষণাপত্রের নামে সব দল ও সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বকে সামনে রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহিরের চেষ্টা হয় কি না। একইসঙ্গে ঘোষণাপত্র প্রকাশের নামে নির্বাচনের দাবিকে গুরুত্বহীন দেখিয়ে বর্তমান শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো অভিপ্রায় দেখা যায় কি না সেটি নিয়েও আলোচনা করেছে দলটির নেতারা।

এমনকি সভায় এই প্রশ্নও ওঠে যে সারাদেশ থেকে গাড়ি বোঝাই করে লোকজন এনে বিশাল শোডাউন করার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে তার উৎস কী। দলটির নেতাদের কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন যে ঘোষণাপত্রের সমাবেশে বিএনপিসহ সব পক্ষ উপস্থিত হলে এবং তাদের সামনে রেখে ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যা চায় সেটিই হয় – এমন ধারণা জাতির সামনে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন তারা এটি নিশ্চিত হয়েছেন যে এ উদ্যোগের সঙ্গে বিদেশি কোন শক্তির যোগসূত্র নেই। তবে দেশের দুটি দলের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধারণা করি।

সভায় এই ধারণাও উঠে আসে ছাত্ররা দল করছে ও তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এখন নেই আর জামায়াত ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিলম্বিত করা গেলে ক্ষমতায় থেকে দল গোছানোর সময় পাওয়া যাবে। সে কারণেই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি হুট করে সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করেন দলের একাংশ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বৈষম্যবিরোধীরা তাদের দাবি বা প্রস্তাব সরকারের কাছেই দিতে পারতো। তা না করে তারা একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু আমাদের তো জানতে হবে এর পেছনে কারা। জানা গেছে, সোমবার রাতের দলের স্থায়ী কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বৈষম্যবিরোধীদের ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগকে 'নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রকল্প' হিসেবে অভিহিত করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের দূরত্ব ও সন্দেহের মূল জায়গাই হলো নির্বাচন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেদিকে আগ্রহ নেই। তারা দল গঠনের কথা বলছে। তারা ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘসময় ধরে দল গঠনের সুযোগ পেলে সেটি বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা আছে। মিজ নাসরীন বলেন বৈষম্যবিরোধীরা তাদের ঘোষণাপত্রে যে-সব বিষয় আনা হবে বলে বলছিলেন সেগুলোর সাথে বিএনপির যোগসূত্র কম, বরং বিএনপি দেখছে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফরম ও তাদের মিত্র নাগরিক কমিটি, সরকার, জামায়াত-সবার মধ্যে একটি অলিখিত ঐক্য গড়ে উঠেছে নির্বাচনের সময়সীমাকে কেন্দ্র করে।

তিনি বলেন, আর এটিই নির্বাচনকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা বলে বিএনপির কাছে মনে হতে পারে। সে কারণে সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় ও বৈষম্যবিরোধী ঘোষণাপত্র প্রকাশ থেকে ব্যাকফুটে আসায় বিএনপি স্বস্তি পেয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

সর্বাধিক পঠিত