• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নানা সঙ্কটের বেড়াজালে আলীগঞ্জ পিটিআই

প্রকাশ:  ২৩ আগস্ট ২০২২, ১১:১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট (পিটিআই) নানা সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জে এটির অবস্থান। আলীগঞ্জ পিটিআই নামেই এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর সামগ্রিক সংস্কার করা না হলে এমন সঙ্কট আরো বাড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আলীগঞ্জ পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবছর চাঁদপুরসহ পাশর্^বর্তী দু-একটি জেলার প্রায় ৪শ’ শিক্ষক দেড় বছর মেয়াদী ডিপিএড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারী এড়ুকেশন) প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে দুই শিফটে মোট ৩শ’ ৯৭ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে মানসম্মত প্রশিক্ষণের জন্য নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ। নেই প্রশিক্ষণ প্রার্থী ৪শ’ শিক্ষকের আবাসিক ব্যবস্থা ও মানসম্মত ওয়াশব্লক। তীব্র সঙ্কট সুপেয় পানির। এর কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর জন্যে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের উপর মানসিক চাপ অব্যাহত রাখেন এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন প্রশিক্ষণার্থীর।  এমনকি চাকুরিভীতি প্রদর্শন করেন এমন অভিযোগ থাকলেও বিষয়টি অস্বীকার করেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে মহিলা প্রশিক্ষণার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। যেহেতু দেড় বছর শিক্ষকরা পিটিআই’র অধীনে ডেপুটেশনে থাকেন, এজন্যে চাকুরি হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত সংস্কারের চিন্তা না করে কোনো প্রকার ভাউচার ছাড়াই প্রতিমাসে সংস্থাপন বিল নামে দুইশ’ টাকা করে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করে আসছে। যা প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকা আদায় হয়।
প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা জানান, তাদের জন্যে একাডেমিক শ্রেণি সংখ্যা হচ্ছে দু’টি। একটিতে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবস্থা থাকলেও অপরটিতে দীর্ঘসময় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবস্থা ছিল না। সম্প্রতি তা স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি সরকারিভাবে প্রত্যেক ইন্সট্রাক্টরের জন্যে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন শিক্ষক আরো জানান, একাডেমিক ভবনের ওয়াশব্লকগুলো ব্যবহার অযোগ্য। নেই পর্যাপ্ত পানি, নেই আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। বছরের পর বছর করা হয়নি বর্জ্য নিষ্কাশন। যে জন্যে সুস্থ মানুষ এমন ওয়াশব্লক ব্যবহার করতে গিয়ে হয়ে পড়ছেন অসুস্থ।
প্রায় ৪শ’ শিক্ষকের জন্যে আছে ৩টি হোস্টেল ভবন। এই ভবনগুলোতে বর্তমানে ১শ’ ৫০ জন শিক্ষক থাকার মতো আবাসিক ব্যবস্থা আছে। তার মধ্যে বর্তমানে থাকছেন মাত্র ১শ’ ৪০জন শিক্ষক। বাকী শিক্ষকরা নিজ খরচে আাশপাশে আবাসিক ব্যবস্থা করে থাকছেন। এসব হোস্টেলে নেই সুপেয় খাবার পানি। যা শিক্ষকদের অন্যতম ভোগান্তির কারণ বলে জানা গেছে। বর্তমানে ১৭ জন ইনস্ট্রাক্টরের স্থলে আছেন মাত্র ৮জন। নেই অফিস সহকারী, দপ্তরী, পিয়ন, ডে-গার্ড। এমন পরিস্থিতিতে সবকিছুই চলছে নানা সংকটের মাঝে জোড়াতালি দিয়ে।
হোস্টেল সংলগ্ন বাউন্ডারী করা মাঠ থাকে স্থানীয় বখাটেদের আড্ডাসহ নানা অপরাধের নিরাপদ স্থান হিসেবে। এখানে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের খেলার জন্যে বখাটেদের দয়ার উপর নির্ভর করতে হয় বলে অভিযোগ আছে। যেজন্য শিক্ষকরা থাকেন  নিরাপত্তাহীনতায়। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছেন না।
প্রতিষ্ঠানটির নানা বিষয়ে সুপারিনটেনডেন্ট অর্চণা কুণ্ডু বলেন, আমি সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে অল্প কিছুদিন হয়েছে যোগ দিয়েছি। তিনি জানান, সংস্থাপন বিল হিসেবে আদায়কৃত টাকা গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাবুর্চিসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হচ্ছে। যার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা রয়েছে। আমি নতুন যোগদান করেছি। তারপরও এসব নিয়ে বসবো। প্রতিষ্ঠানের নানা সমস্যার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নলেজে রয়েছে বলে জানান তিনি।