ছারছীনা শরীফের মাহফিল ও জমইয়াতে হিযবুল্লাহ সম্মেলন
সঠিকভাবে ইসলামের চর্চাই শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারে :ছারছীনার পীর ছাহেব
পাক-ভারত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম, শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী ও আধ্যাত্মিক প্রাণকেন্দ্র ছারছীনা দরবার শরীফের ১৩২তম ৩দিনব্যাপী ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। ১৪ মার্চ সোমবার বাদ জোহর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এ মাহফিল শেষ হয়।
মোনাজাতের পূর্বে বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমীর ও ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মাদ্দা জিল্লুহুল আলী) বলেন, তরীকা মশকের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন-যাপন করতে পারে। আর প্রকৃত মুসলমান হয়ে কবরে যেতে পারলেই কেবলমাত্র নাজাতের আশা করা যায়। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ ফরমান ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ তিনি আরো বলেন, তরীকা হলো সঠিকভাবে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা, জিকির-আজকার, মুরাকাবা-মুশাহাদার মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধন করা এবং আধ্যাত্মিক জগতে ক্রমোন্নতি লাভ করা। তরীকতের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মনুষ্যত্ব, মহানুভবতা, উদারতা ও সহমর্মিতার সুকুমার বৃত্তিগুলো বিকাশ লাভ করে। আর পশুত্ব, হিংসা, অহঙ্কার ও আত্মম্ভরিতা যেমন মানবতা বিধ্বংসী কুফুরিগুলি দূরীভূত হয়। তাই সঠিকভাবে ইসলামের চর্চা ব্যতীত যেমন প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না, তেমনি মনুষ্যত্ববিহীন মানব সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি থাকতে পারে না।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এমএম এনামুল হক, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম, পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ একেএম আব্দুল আউয়াল, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা মির্জা নূরুর রহমান বেগ, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, মাওলানা মোঃ সিরাজুম মুনীর তাওহীদ, মাওলানা মোঃ রুহুল আমীন আফসারী, মাওলানা মোঃ রুহুল আমীন ছালেহী প্রমুখ।
তিনদিনব্যাপী মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি এস.এম. আক্তারুজ্জামান, পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ সাঈদুর রহমান (পিপিএম), নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোশাররেফ হোসেন, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন এবং স্বরূপকাঠী পৌরসভার মেয়র মোঃ গোলাম কবিরসহ স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা ও সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
আখেরী মোনাজাতের পূর্বে গতকাল বাদ জোহর মিলাদ, তওবা ও বাইয়াত গ্রহণের পর সকলকে লক্ষ্য করে নসিহত করতে গিয়ে পীর ছাহেব কেবলা বলেন, আল্লাহ চাহেতো আজ হতে ৮ মাস পর অগ্রহায়ণের মাহফিলে আবার দেখা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তিনি সকলকে নিয়মিত অজিফা ও আমলের উপর মজবুত থাকতে বলেন এবং বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর মাধ্যমে তা’লীমী জলসা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তিনি সমবেত জনতাকে হাত তুলে সুন্নাত তরীকা মোতাবেক আমল করার অঙ্গীকার গ্রহণ করান।
বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া মোনাজাত প্রায় দীর্ঘ ৪০ মিনিটব্যাপী চলমান থাকে। প্রায় দুই কিলোমিটারব্যাপী মাহফিল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মোনাজাতে হযরত পীর ছাহেব কেবলা সমবেত জনতার হেদায়েত এবং বিশ^ মুসলিমের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে হযরত পীর ছাহেব কেবলা যখন সকলের গোনাহ মাফ চেয়ে বার বার আল্লাহর দররারে ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন তখন সকলের ক্রন্দন রোলে এবং আমীন আমীন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তখন মর্মস্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হতে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতানুযায়ী আখেরী মোনাজাতে দশ লক্ষাধিক লোক অংশগ্রহণ করেছে।