• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

প্রধান বিচারপতির ছুটির ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র (এসকে সিনহা) এক মাসের ছুটির ফাইল এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ফাইলটি ই-ফাইলে রুপান্তর করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন হয়ে এলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। 

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদন আমরা পেয়েছি। ওই আবেদনের সব প্রক্রিয়া শেষ করে এরই মধ্যে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ফাইলটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হয়ে ফেরত এলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম করবো।  

প্রসঙ্গত, সোমবার  রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি আবেদন করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি চেয়েছেন। ছুটির আবেদনে কাল থেকেই তিনি ছুটিতে যেতে ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমি যতদূর জানি, উনি (বিচারপতি সিনহা) আগামীকাল থেকে ছুটিতে যাবেন।

এদিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে তার বাসভবনে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। সভাপতির কার্যালয়ে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, তারা শুনেছেন তিনি (প্রধান বিচারপতি) হঠাৎ করে ছুটির কথা জানিয়েছেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কোনো আমলেই আদালত খোলার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কেন তিনি ছুটি নিয়েছেন তা তারা জানেন না। সাক্ষাতের পর বিষয়টা জেনে তিনি সাংবাদিকদের জানাবেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।

রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

১৪ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিচারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংসদে ওই দিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়, যাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করেছে।

২৭ আগস্ট থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি ছিল। কাল থেকে নিয়মিত আদালত বসছে। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশ সফরে ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ৩ জুলাই খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’-সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বিল অনুসারে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ দফায় বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাসংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’ ৩ দফায় বলা হয়েছে, এ অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব-সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত ৪ জানুয়ারি আপিল করে। আপিলের ওপর গত ৮ মে শুনানি শুরু হয়, যা ১১তম দিনে গত ১ জুন শেষ হয়। ওই দিন আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। গত ৩ জুলাই রায়ের সংক্ষিপ্তসার ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।