• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সুপ্রিমকোর্টকে ভয়াবহ এই অভিযোগের নিষ্পতি করতে হবে

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৭ | আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৯
সালেহউদ্দিন
প্রিন্ট

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং প্রধান বিচারপতির কর্তৃক অভিমত নিয়ে যে ঝড় বইছিলো ঈদের ছুটি,  সুপিম কোর্টের অবকাশ এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপাতত তার অবসান হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আপিল বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে হাজির হয়েছিলেন। যদিও এর দিন কয়েক আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা উচিত বলে অভিমত দিয়েছিলেন। আর দিন কয়ক পর সংসদে বিচার বিভাগ তথা প্রধান বিচারপতির বিষেদগার করা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীও এই আলোচনায় শরিক হন। সংসদে আলোচনার পর রোহিঙ্গা ইস্যু এতো গুরুতর আকার ধারন করেছে যে মনে হচ্ছে সাবেক ইস্যুটি হারিয়ে গেছে। কিন্ত যে কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে তার নিষ্পত্তি হওয়াটা খুব জরুরি।

দেশ স্বাধীনের পর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলন মোট ২১ জন। এদের প্রায় সকলেই সরকার প্রধান বা রাজনৈতিক নেতাদের আয়োজিত সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলতেন। শুধুমাত্র বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে বিচারপতিদের যোগ দেয়ার প্রচলন ছিল। খালেদা জিয়ার দুই এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে যারা প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন তাদের কেউই ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা’ অনুষ্ঠানে যাননি। ২০১০ সালে দীর্ঘদিনের এই প্রথা প্রথম ভাঙলেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। এরপর বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং  বিচারপতি এসকে সিনহা খায়রুল হককে অনুসরণ করে চলছেন।

উচ্চ আদালতে যে সব মামলা দায়ের হয় তার শতকরা  ৮০ ভাগের বাদী বা বিবাদী সরকার। এর মধ্যে কিছু মামলায় সরকার প্রধানের রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে মামলার একটা পক্ষের বাড়িতে গিয়ে দই-মিষ্টি খাওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত? সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রনীত আচরণ বিধিতে এসব সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া কতটুকু অনুমোদন করে? এ প্রশ্ন উঠা খুবই কি স্বাভাবিক? তাদের পূর্বসুরিদের এসব অনুষ্ঠানে না যাওয়াটা কি অসংগত ছিল? কিন্তু এসব প্রশ্নের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার নিষ্পতি হওয়া খুবই জরুরি। 

আগামী ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষ হবে। কোন অঘটন না ঘটলে প্রধান বিচারপতিকে তখন আমরা বিচারাসনে বসতে দেখবো। কিন্তু ভয়াবহ দু’টি অভিযোগ নিষ্পতির আগে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা কি সঠিক হবে? প্রথমত: তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি তার নয়। আইনপেশায় নিয়োজিত একজন রাজনীতিবিদ অভিযোগ করেছেন, রায়টি পেনড্রাইভে করে এসেছে এবং ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক এটি লিখে দিয়েছেন। আপিল বিভাগের আরেকজন সাবেক বিচারপতিও অভিযোগ করেছেন, রায়টি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লিখে দিয়েছে।

কাগজে কলমে আমরা জানি ষোড়শ সংশোধনীর মূল রায়টি প্রধান বিচারপতি নিজেই লিখেছেন। আপিল বিভাগের ছয় বিচারকের মধ্যে একজন আলাদা কোনো অভিমত না দিয়ে প্রধান বিচারপতির রায়ের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। একটি বিষয়ে দ্বিমত ছাড়া অপর চার বিচারপতিও প্রধান বিচারপতির রায়ের প্রতি সমর্থন জানান। কিন্তু যে অভিযোগটি উঠেছে তাতে ইংগিত করা হয়েছে এটি একটি ফরমাইশি রায়। এর মাধ্যমে বিচারপতিদের যোগ্যতা, সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ আর কখনো উত্থাপিত হয়নি।

দ্বিতীয় অভিযোগটি এসেছে দু’টি গণমাধ্যম থেকে। একটি টিভি চ্যানেল ও একটি প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয়ে গরমিল এবং তার ব্যক্তিগত একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য রয়েছে! এগুলো কোনো সাদামাটা অভিযোগ নয়। বিচার বিভাগ তথা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কি হতে পারে? 

ব্যক্তিগতভাবে আমি এ অভিযোগ বিশ্বাস করি না। কিন্তু এটি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয় নয়। এসব অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচারব্যবস্থা এবং সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। 

পুনশ্চ: একটা মর্মবাণী দীর্ঘকাল ধরে শুনে আসছি ‘বিচার শুধু করলেই চলবে না। মানুষের সামনে এই ধারণাও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে ন্যায় বিচার হয়েছে।’

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক এবং ল'রিপোর্টস ফোরামের সাবেক সভাপতি।

সর্বাধিক পঠিত