মহামারির সংক্রামণ কমাতে সঠিক আইন জানা জরুরি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ০৫:০২
জান্নাতুন নিসা
প্রিন্ট
পৃথিবীর সুন্দর শত উপলব্ধির পাতায় সংক্রমণ বরাবরই পদ্মশোভিত উর্বশী। সে নানা নামে নানা রূপে আমাদের সংক্রমণের পাল্লাকে ভারী করেছে। আর মানুষও তাকে বাক্সবন্দী করতে আলাদিনের চেরাগ হাতে ছুটে বেড়িয়েছে যুগের পর যুগ। থেমে থাকেনি কারোরই পথচলা। যেমন এসেছে গুটিবসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লু, ইবোলা সহ অসংখ্য সংক্রামক রোগ; তেমনি এসবের প্রতিষেধক বা প্রতিরোধের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে মানুষ। কারণ অসম্ভবের পায়ে ভর করে এগিয়ে যাওয়াই মানুষের ধর্ম কম কর্ম বেশি! কষ্ট কিংবা দেরী হলেও সমাধান সে ঠিকই করেছে প্রতিটি বিপর্যয়ের। বিশ্বব্যাপী সংক্রামক ব্যাধিতে মানুষ যেনো নিজে বাঁচার পাশাপাশি অন্যকে সংক্রামিত না করতে পারে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে পাশ করা আইনও রয়েছে। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে প্রতিটি স্বার্বভৌম দেশেই কমপক্ষে একটি করে উপযুক্ত আইন রয়েছে। আর এই আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এমনও বলা হয়েছে মহামারি এলে সংক্রমিত অঞ্চল অবরুদ্ধ করতে হবে। কোন নাগরিক তা অমান্য করলে জেল কিংবা জরিমানা দিতে হবে।
এক সাগর রক্তের বিনিময় অর্জিত আমাদের লাল-সবুজের দেশেও রয়েছে আইনের ধারা। অবাক হলেও সত্য এটাই যে আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ নাগরিক এই আইন কিংবা এর ধারা সম্পর্কে জানেন না। আর জানা বিষয়ই যেখানে মানতে আমাদের অসুবিধা হয়, সেখানে না জানা বিষয় মানার অনাগ্রহ খুবই স্বাভাবিক। আমরা জানি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ সময়কালে ধাপে ধাপে বৃটিশ প্রণিত আইনের ধারা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে স্বকিয়তা অর্জন করে হাঁটছে আপন পথে। সেই সুবাদে বৃটিশ প্রণিত ১৮৯৭ সালের এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ পাস করা হয়। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এই আইনের ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলেই ধারায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শব্দটি না থাকলেও ‘সংক্রমিত এলাকা' না বলে সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। সে যাইহোক, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-তে কোভিড ১৯-এর নাম না থাকলেও সরকার চাইলে গেজেট করে যেকোনো রোগকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। আর ধারা অনুযায়ী বর্তমানে সংক্রমণ প্রতিরোধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে আইনগতভাবে সক্ষম থাকবে আইইডিসিআর এর মহাপরিচালক। এই আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিষদ না হলেও সংক্ষিপ্তাকারে চলুন জেনে নেই আইনের এই ধারাগুলো।
সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে আইনের কিছু ধারা-
১১ । (১) মহাপরিচালক সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে আদেশ দ্বারা নিম্নবর্ণিত কোনাে এলাকাকে সংক্রমিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করিতে পারিবেন।
(ক) বাংলাদেশের স্থানীয় কোনো এলাকা বা অঞ্চল যাহা কোনো সংক্রামক ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে বা আক্রান্ত হইয়া থাকিতে পারে মর্মে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ হইতেছে।
(খ) সংক্রমণের বিস্তার নির্মূল বা সীমিত করিবার জন্য সংক্রমিত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, গৃহ, আঙিনা, বাসস্থান বা যানবাহন।
(২) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনাে সংক্রামক রােগ সীমিত বা নির্মূল সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনাে ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।
(৩) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকালে, অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য গোপনের অপরাধ ও সাজা বা দণ্ড সংক্রান্ত ধারা-
২৪। (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নারী নেত্রী।