• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অবৈধভাবে বরফ উৎপাদন করছে ইলমা বরফকল

প্রকাশ:  ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৩:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ইলিশ সম্পদ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল হচ্ছে নদ-নদীতে মাছের অভয়াশ্রম। এ সময়ে নদ-নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একই সাথে এর সংশ্লিষ্ট বরফ উৎপাদনও এই দুই মাস বন্ধ রাখা হয়। অথচ সরকার ঘোষিত অভয়াশ্রম চলাকালীন চাঁদপুর শহরে প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে রাতের আঁধারে বরফ উৎপাদন করছে ইলমা শাহরিন এন্ড কোম্পানী নামে বরফকল। রাতের আঁধারে নদীপথে এসব বরফ জাটকা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভয়াশ্রম চলাকালে চাষকৃত (জিয়ল মাছ) মাছ সংরক্ষণ করার জন্যে চাঁদপুর শহরের ২টি বরফ কলকে বরফ উৎপাদনে পালাক্রমে ১ মাস করে অনুমোদন দিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। মার্চ মাস বরফ উৎপাদন করবে নতুনবাজারের ইলমা শাহরিন এন্ড কোম্পানী এবং এপ্রিল মাসে উৎপাদন করবে বিসমিল্লাহ আইস ফ্যাক্টরী মেশিনারিজ। সমঝোতার ভিত্তিতে এ অনুমোদন দেয়া হয়। তবে বিসমিল্লাহ আইস ফ্যাক্টরীর রিপিয়ারিং কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিসমিল্লাহ আইস ফ্যাক্টরীর পরিবর্তে চাঁদপুর বরফকল মালিক সমিতির অনুরোধে পুরাণবাজার পূবালী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজকে (আইচ ফ্যাক্টরী) বরফ উৎপাদনের অনুমতি প্রদান করে জেলা মৎস্য বিভাগ। এরই আলোকে পুরো মার্চ মাস বরফ উৎপাদন করে আসছিলো নতুনবাজারের ইলমা শাহরিন এন্ড কোম্পানীর বরফকলটি। কিন্তু জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া সময়সীমা শেষ হলেও সবার চক্ষুকে আড়াল করে রাতের আঁধারে এপ্রিল মাসেও বরফ উৎপাদন করে যাচ্ছে এই বরফকলটি।
গত সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলমা বরফকলে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে কিছু লোক পাহারায় রেখে ভেতরে শ্রমিকরা বরফ উৎপাদন করছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজ কিছুটা সময় বন্ধ থাকলেও জেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে, এমন দোহাই দিয়ে পুনরায় তারা কাজ শুরু করে।
অভিযোগ রয়েছে, বরফকলটি ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই রাতের আঁধারে ট্রলারযোগে ভ্রাম্যমাণ জাটকা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে কেইন কেইন বরফ।
বরফকল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইলমা শাহরিন এন্ড কোম্পানীর পরিচালক রফিকুল্লাহ নিজের ইচ্ছামতো বরফ উৎপাদন করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নতুনবাজারের ইলমা বরফকল যদি এপ্রিল মাসেও চালু রাখে তা অবৈধভাবে চালু রয়েছে। তাদের চালু রাখার কথা মার্চ মাসে। এপ্রিল মাসে চালু রাখবে পুরাণবাজারে পূবালী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজ (আইচ ফ্যাক্টরী) বরফকল। আমি এখনি তাদের ডাকাচ্ছি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুল বাকী জানান, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, দু মাস অভয়াশ্রমকালে নতুনবাজার ও পুরাণবাজারে দুটি বরফ কল চালু থাকবে। এর মধ্যে নতুনবাজারের ইলমা বরফকল চলবে মার্চ মাসে, আর পুরাণবাজারে পূবালী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজ (আইচ ফ্যাক্টরী) বরফকল চলবে এপ্রিল মাসে। সে হিসেবে পুরাণবাজারে এখন (এপ্রিল মাসে) পূবালী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজের (আইচ ফ্যাক্টরী) বরফ চলবে। আর নতুনবাজারের ইলমা বরফকল বন্ধ থাকার কথা। তারা চালাচ্ছে আমার জানা নেই। আমি এখনি আমাদের লোক পাঠাচ্ছি, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যপারে চাঁদপুর বরফকল মালিক সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী জানান, মার্চ মাসে ইলমা শাহরিন এন্ড কোম্পানী জিয়ল মাছের (চাষকৃত) জন্যে বরফকল চালু রাখবে। এপ্রিল মাসে চালু থাকবে পুরাণবাজারের পূবালী আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজের (আইচ ফ্যাক্টরী)। কিন্তু ইলমা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে কোন্ খুঁটির জোরে বরফ উৎপাদান করছে তা আমাদের জানা নেই।
চাঁদপুর বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় কোনো অভিযানের সময় আমরা বরফকল চালু রাখি না। জেলার মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধে চাষকৃত মাছ সংরক্ষণের জন্যে বরফ উৎপাদন করতে হচ্ছে। কিন্তু ইলমা বরফকলটি চাষকৃত মাছের বাইরে জাটকা ব্যবসায়ীদের কাছে বরফ বিক্রি করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে পুরো মার্চ মাস বরফ উৎপাদন করার পরও এপ্রিলে রাতের আঁধারে চুরি করে বরফ উৎপাদন করছে। আমরা এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের বরাবর লিখিত অভিযোগ করবো।

 

সর্বাধিক পঠিত