আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৫ সদস্য আটক
চাঁদপুর শহরে বিভিন্ন সময় দিনের বেলায় ফ্ল্যাট বাড়িতে সংঘটিত একাধিক চুরির ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
৩০ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার। এ সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মনির আহমেদ, উপ-পরিদর্শক মোঃ রাশেদুজ্জামান ও আওলাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত আন্তঃজেলা চোরচক্রের পাঁচজন হলো : মূল হোতা যাত্রাবাড়ি করাতিটোলা এলাকার হিমেল ওরপে হাড্ডি হিমু (২২), আরিফ হোসেন (২০), কামাল খন্দকার (১৯), নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্দমগঞ্জ-সোনারগাঁও এলাকার সিফাত আহমেদ রাসেল (২৩) ও কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার নয়ন নগর এলাকার ইমন হোসেন (২০)।
২৮ ও ২৯ মার্চ রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশের সহায়তায় এদেরকে আটক করে চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার জানান, চাঁদপুর সদর মডেল থানাধীন শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরি সংঘটিত হয়েছিল। ওইসব ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। ২৯ মার্চ রাত দুটোর সময় চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী এলাকার পালকি হোটেলে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। ওই সময় কালাম খন্দকার ও আরিফকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য আসামী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করার কথা জানালে অভিযান পরিচালনাকারী টিম ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে এবং চোর চক্রের মূল হোতাসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় দুটি চুরির মামলা রয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চুরির ঘটনায় আসামীরা জড়িত বলে স্বীকার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন চুরির ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামীদের চিহ্নিত করা হয়। আসামীদের মধ্যে আরিফ এবং ইমনের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন থানায় পাঁচটি করে এবং চোর চক্রের মূল হোতা হাড্ডি হিমুর বিরুদ্ধে সাতটি চুরির মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আটক আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়া এলাকার সালাউদ্দিন (দুবাই প্রবাসী) জানান, চোর চক্র তার সর্বস্ব নিয়ে গেছে। এখন তাঁর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনি জিয়া হোস্টেলের পেছনে হাজেরা নিবাসের ভাড়াটিয়া।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাজেরা নিবাসের চতুর্থ তলার ভাড়া বাসা থেকে তার ১৮ ভরি স্বর্ণ, নগদ আড়াই লাখ টাকা ও ২টি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায় চোর চক্র।
আরেক চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাঁদপুর শহরের জোড়পুকুর পাড় এলাকার পারভেজ ভূঁইয়া রাজু জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সিরাজ খানের পঞ্চম তলার ভাড়া বাসা থেকে তার ঘরে থাকা ১০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় চোর।
এদিকে চাঁদপুর মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরে দিনে দুপুরে বেশ ক’টি বাসা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। তারই সূত্র ধরে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদকে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ দিক-নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া ও উপ পরিদর্শক রাশেদুজ্জামান তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোর চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
পরে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া ও উপ-পরিদর্শক রাশেদুজ্জামান এবং আওলাদ হোসেন সঙ্গীয় সদস্যদের নিয়ে ২৮ ও ২৯ মার্চ ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার করাতিতোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরচক্রের মোট ৫ জনকে আটক করে।
এই চোর চক্রের আরেকজন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার বলিয়াদী গ্রামের রফিকুল হাসানের ছেলে ইফতেখারুল হাসান সাঈদ (২৪)কে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ আটক করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।