• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচরে শিশু মারজান হত্যা মামলার আসামী সেলিম বেপারী গ্রেফতার

এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে গ্রেফতার করে হত্যার মূল কারণ উদ্ঘাটন

প্রকাশ:  ০৮ জুন ২০২০, ১০:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচরে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী শিশু মারজান (৯) কে ধর্ষণ শেষে হত্যা করায় যে মামলা দায়ের হয়, সে মামলার অন্যতম আসামী সেলিম বেপারী (২২) অবশেষে ডিবি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। গতকাল সে আটক হয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গতকাল ৭ জুন বেলা ২টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় এসআই রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স আসামী সেলিম মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বিকেল অনুমানিক সাড়ে ৫টায় স্থানীয় মুকশেদ হাওলাদারের ১ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে, স্থানীয় চর কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী মারজানকে ১০০ টাকা দিয়ে ঈশানবালা বাজারে পাঠায় তার মা। বাজারে যাওয়ার পথে স্থানীয় চৌকিদার নান্নু মিয়া মারজানের মুখ চেপে ধরে জনৈক নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে সে সহ ৪ জন নরপশু জোরপূর্বক পালাক্রমে মারজানকে ধর্ষণ করে। মারজানের গোপনাঙ্গে রক্তের ধারা বয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মারজান। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে এ কারণে ৪ পাষ- নরপশু গলা টিপে হত্যা করে মারজানকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরু হলেও মারজান বাড়ি ফিরে না আসায় সবাই এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত মারজানের উলঙ্গ প্রাণহীন দেহ পাওয়া যায় হাইমচর থানার ঈশানবালা এলাকায় মারজানের বাড়ির অদূরে নদীর পাড়ে। ধর্ষক ও হত্যাকরীরা এলাকার সুবিধাবাদী মহলের যোগসাজশে সুকৌশলে মারজানকে জ্বীনে মেরেছে বলে প্রচার করে। মারজানের মৃতদেহ দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে।

কিন্তু হতভাগা মারজনের মা-বাবার মন কিছুতেই সায় দেয় না যে, তাদের অাঁচলের নিধি মারজানকে জ্বীনে মেরেছে। মনকে কোনোভাবেই বুঝ দিতে না পেরে মারজানের বাবা ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি ঈশানবালা সাকিনের দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে জালাল মিয়া হাওলাদার (২১), কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম গংকে আসামী করে মামলা করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুরের আদালতে। আদালত ওসি হাইমচর থানাকে সরাসরি মামলা রুজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানায় মামলা নং-০৪ তারিখ ১৬/০১/১৮ ইং ধারা-৩০২/৩৭৬/২০১/৩৪/১০৯ দঃ বিঃ রুজু হয়। তদন্তভার দেয়া হয় হাইমচর থানার এসআই সুমন মিয়াকে।

১ বছরেও মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপার চাঁদপুর মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। আইও নিয়োগ করা হয় ডিবির এসআই শামীম আহম্মদকে। এসআই শামীম বদলি সূত্রে অন্যত্র গেলে চলতি ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এসআই রেজাউলকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়। এক মাসের মাথায় এসআই রেজাউল মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে গ্রেফতার করেন শরীয়তপুর থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু নিজে এজাহার নামীয় ৩ আসামীসহ মারজানকে নারকীয়ভাবে ধর্ষণ ও হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ দেয় এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া ডিবি চাঁদপুরের দায়িত্ব গ্রহণের পর এ মামলাটির তদন্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইওকে বিশেষ দিক নির্দেশনা দেন।

ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)-এর দিক নির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭ জুন বেলা ২টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় এসআই রেজাউল করিম সঙ্গীয় ফোর্স সহ এজাহার নামীয় অন্যতম আসামী মোঃ সেলিম বেপারী (২২), পিতা- শফিউল্লাহ বেপারী, সাং-সুরুজ সরকারকান্দি, চরবাও, ঈশানবালা, থানা : হাইমচর জেলা : চাঁদপুরকে গ্রেফতার করেন।

ওসি ডিবি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, আসামী সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন সহ আদালতে প্রেরণ হবে।

সূত্র : ডিবি চাঁদপুর-এ ফেসবুক পেজ।

সর্বাধিক পঠিত