চাঁদপুরে নাভানা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু
চাঁদপুর শহরের নাভানা হাসপাতালে ২ সন্তানের জননী তুহিন বেগম ভুল চিকিৎসা মারা যায়। রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও সঠিক সময় চিকিৎসক না আসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত তুহিন বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান জানান, রোববার ভোর ৪টায় সাংবাদিক ও পুলিশকে জানানোর সুযোগ না দিয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিশোর কুমার সিংহ রায়সহ অন্য স্টাফরা চিকিৎসার টাকা না রেখে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে মৃত রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলার দায়েরর প্রস্ততি চলছে।
নিহত রুগি তুহিন বেগমের স্বামী ও আত্বীয়-স্বজনরা জানান, তুহিন বেগমের পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হলে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে গাইনী চিকিৎসক সামছুন্নাহার তানিয়াকে দেখায়। তার কথা মত আলটাসনোগ্রাম করানোর পর তুহিন বেগমের পেটে টিউমার হয়েছে বলে তিনি জানান। সেমতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। তুহিন বেগমের স্বামী তার স্ত্রীকে নাভানা হসপিটালে ভর্তি করেন। গাইনী চিকিৎসক সামছুন্নাহার তানিয়া তুহিনকে আগামী সোমবার অপারেশনের সময় নির্ধারন করেন। হঠাৎ গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় কোনো রকম পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়া তুহিন বেগমকে অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান চিকিৎসক সামছুন্নাহার তানিয়া। সেখানে সামছুন্নাহার তানিয়া ও তার স্বামী ডাঃ মোঃ হাসানুর রহমান মিলে তুহিন বেগমকে অপারেশন করেন। রাত সাড়ে ৭টায় আধা ঘন্টা রাখার পর রুগী তুহিন বেগমকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের বেডে দিয়ে দেয়া হয়। রাত ২টায় রুগী তুহিন বেগমের জ্ঞান ফিরলে সে প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে ও কাতরাতে থাকে। তখন রুগীর সাথে থাকা নাছিমা বেগম, হাওয়া বেগম ও বিউটি বেগম, সিস্টার সাহিদা বেগমকে বিয়টি জানালেও কোন চিকিৎসক না আসায় রুগি তুহিন বেগমের শারিরিক অবস্থা মারাত্মক অবনতি ও খারাপ হয়ে যায়। সিস্টার সাহিদা বেগম জানান, হঠাৎ রোগীর শরীরে খিচুনি দেখা দেয়। এক পর্যায় সে প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করে ও কাতরাতে কাতরাতে শনিবার ভোর পৌনে ৪টায় মারা যায়। নিহত তুহিন বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিশোর কুমার সিংহ রায়সহ অন্য স্টাফরা নাভানা হসপিটালের চিকিৎসার টাকা না রেখে কোন অনুরোধ না শুনে তড়িঘরি করে চালক সুমনের অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে মৃত রোগীকে জোর করে বের করে দেয়। নিহত তুহিন বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান আরো বলেন, যদি চিকিৎসক সময় মতো আসতো তাহলে হয়ত আমার স্ত্রীকে বাঁচানো যেতো। আমি আমার স্ত্রীকে কেন ভুল চিকিৎসা দিয়ে মারলো তার জন্য প্রশাসনের নিকট এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করছি। আমি চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে বিষয়টি জানিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক মোঃ হাসানুর রহমান বলেন, রাত ৮টায় রুগী তুহিনকে অজ্ঞান না করে অবশ করে পেট কেটে ওবারিয়াম সিস্ট (এটা হচ্ছে ভেতরে পানি উপরে পর্দা) কেটে ফেলে দেয়া হয়। পরে তার জ্ঞান ফিরলে আমি চলে যাই। রাতে তার অবস্থা খারাপ হলে ডিউটি ডাক্তার জীবন বিভিন্ন চিকিৎসা দিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি। প্রচন্ড ব্যাথায় (এমআই) হার্ট অ্যাটাক করেছে।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক সামছুন্নাহার তানিয়া জানান, আমি অপারেশন করি নাই। আমি অপারেশনের সময় পাশে ছিলাম।
এ ব্যাপারে নাভানা হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিশোর কুমার সিংহ রায় মুঠে ফোনে জানান, এ ব্যাপারে তার কিছু বলা বা জানা নেই। আমি সরকারকে টেক্স দিয়ে ব্যবসা করি। এ বিষয়ে আমি জবাব দিবো না। রোগী চিকিৎসার জন্যে ভর্তি হয়েছে, সেটা যে চিকিৎসক অপারেশন করেছে, সে সেটা জানে। মারা গেলে সে জবাব দিবে আমি ডাক্তার না কিছু জানি না। কিছু জানতে হলে রোগীর স্বামীকে নিয়ে আসেন।