বখাটের অত্যাচারে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ থানায় মামলা
চাঁদপুর জেলাধীন শাহরাস্তিতে এক বখাটের অত্যাচারে ক্ষোভে লজ্জায় ঈদের আগের দিন নিজ ঘরে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক প্রবাসির স্ত্রী। এ ঘটনায় ওই বখাটেকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে ভূক্তভোগির পরিবার।
ঘটনার বিবরণে জানাযায়, শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক পাটওয়ারী বাড়ীর সৌদিপ্রবাসি তৌকির আহমেদ প্রায় ৪ বছর পূর্বে প্রেম করে বিবাহ করেএকই ইউনিয়নের রাড়া গ্রামের মশিউর রহমানের মেয়ে জান্নাতুন নাঈমকে। বিয়ের কয়েক বছর পরেই জীবিকার তাগিদে সৌদি চলে যায় তৌকির।
ঈদের আগের দিন রবিবার দুপুরে জান্নাতুল নাঈমের শাশুড়ী হাজীগঞ্জ বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসলে পুত্রবধু জান্নাত দুপুরে গোসল খানায় গোসল করতে যায়। গোসলের সময় একই বাড়ীর হারুন পাটওয়ারীর বখাটে ছেলে হাছান (২২) গোসল খানার ফাঁক দিয়ে জান্নাতের গোসলের দৃশ্য দেখে। এর পূর্বেও বখাটে হাছান জান্নাতকে কয়েকবার খারাপ উক্তি করে বলে জানান জান্নাতের শাশুড়ী পারুল বেগম। এ ঘটনা জান্নাত গোসল করে বের হওয়ার পর বখাটে হাছান জান্নাতকে গোসলের সময় গোসল খানার সব দৃশ্য দেখে ফেলছে বলে জানিয়ে বিভিন্ন বাজে কথা বলে। এ ঘটনাটি মূহুর্তের মধ্যে সে ওই এলাকার কয়েকজন বখাটেকে জানায়। বিষয়টি জান্নাতের কানে গেলে জান্নাত তার সৌদি প্রবাসি স্বামী তকিরকে বিষয়টি অবহিত করেন। তোমাদের বাড়ীর হাছান ছেলেটি খুবই নোংরা ও খারাপ। দেশে এসে তার বিচার করো। এ কথা বলেই লাইন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পরে নিজ ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এরপর তার স্বামী সৌদি আরব থেকে কয়েকবার ফোন করলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় তৌকির তার চাচীকে ফোন করে। চা”ী তাদের ১১ বছরের মেয়ে সুরভীকে ঘরে পাঠিয়ে জান্নাতকে ডেকে আনতে বলে, সুরভী ঘরে ডুকে জান্নাতকে না পেয়ে জান্নাতদের রুমে গিয়ে দেখে জান্নাত ফাঁসিতে ঝুলে রয়েছে। তার চিৎকারে বাড়ীর অন্যান্যরা মিলে তাকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাটি হাজীগঞ্জ থানায় জানানো হলে, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে শাহরাস্তি থানাকে অবহিত করে। শাহরাস্তি থানার এসআই মোজাম্মেল এসে জান্নাতের মৃতদেহ সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে। ঈদের দিন সোমবার বাদ আসর নিহত জান্নাতের জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত জান্নাতুল নাঈম চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্সে পড়–য়া শিক্ষার্থী।
জান্নাতের শাশুড়ী পারুল বেগম জানান, আমি আমার ছেলের বৌকে আমার সাথে বাজারে আসতে বলেছিলাম, সে গোসল না করায় আমি আমার ঝাসহ বাজারে আসি। বাজার করার শেষ পর্যায়ে আমার ঝা’র ফোনে ফোন আসে আমার ছেলের বৌ ফাঁসি দিয়েছে। কিসের মধ্যে কি ঘটলো আমিতো কিছুই জানিনা। এ সময় তিনি বিলাপ করে বলেন, আমাদের বাড়ীর হাছান আমার ছেলের বৌকে বিভিন্ন সময় খারাপ কথা বলতো।
শাহরাস্তি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহআলম জানান, এ ঘটনায় নিহত জান্নাতুল নাঈমের শাশুড়ী পারুল বেগম বখাটে হাছানকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। আসামীকে ধরার জন্য অভিযান চলছে। নিহত জান্নাতুল নাঈমের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।