• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জে প্রতিবন্ধী যুবককে হত্যার অভিযোগে তরুণ লীগ নেতা আটক

ভাতার কার্ডের জন্যই কি প্রাণ দিতে হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নূরুকে?

প্রকাশ:  ২৯ মে ২০১৯, ১০:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাজীগঞ্জে নূরুল ইসলাম নূরু (২৫) নামে দৃষ্টি প্রতিবদ্ধী এক যুবককে হত্যার অভিযোগে ইউনিয়ন তরুণলীগের সভাপতি কাউসার হামিদকে (২৮) গতকাল মঙ্গলবার আটক করেছে পুলিশ। এর আগে একই দিন ভোরবেলা পুলিশ উপজেলার ৬নং বড়কূল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রামের কৃষি জমির মাঠ থেকে নূরুর লাশ উদ্ধার করে। নূরু স্থানীয় এন্নাতলি গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির আবুল বাসার পাটওয়ারীর ছোট ছেলে। আটক কাউসার হামিদ একই গ্রামের মিজি বাড়ির মৃত আতিকুর রহমানের ছেলে। নূরুর বাবার অভিযোগ, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীর কার্ড পাওয়া নিয়ে নূরুর সাথে দ্বন্দ্ব চলছিলো তরুণ লীগ নেতা কাউছার হামিদের। এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে এন্নাতলী গ্রামের কৃষি জমিতে শুধু প্যান্ট পরাবস্থায় নূরুর লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। এরপরেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নূরুল ইসলাম নূরু মারা যাওয়ার বিষয়টিকে স্থানীয়রা হত্যা হিসেবে দেখছে। আর এ নিয়ে এলাকার যুবকরা ‘নূরুকে হত্যা করা হয়েছে, নুরু হত্যার বিচার চাই’; আবার পুলিশের হাতে আটক কাউসারের নাম ও ছবি দিয়ে নূরুর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিনভর স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, নূরুর সাথে আটক কাউসারের প্রতিবন্ধী কার্ড বিতরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিলো। আটক কাউসার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন তরুণলীগের সভাপতি।
নিহতের বাবা আবুল বাসার ঘটনাস্থলে জানান, আমি, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্যে আমি ও আমার ছেলেসহ এলাকার অনেকে তরুণলীগ নেতা কাউসারকে টাকা দিয়েছি। কিন্তু গত এক বছরে ভাতার কার্ড পাইনি। এ বিষয়ে আমার ছেলে প্রতিবাদ করেছে। যার কারণে ইতিপূর্বে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে কাউসার।
এ দিকে মৃত্যুর দেড় মাস পূর্বে সাংবাদিকের কাছে নূরুর তথ্য দেয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণলীগ নেতা কাউসার হামিদ প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে নূরুর কাছ থেকে ২৭শ’ টাকা নেয়। তারপরও কার্ড না পাওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীর কাছে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পায়নি বলে ভিডিও থেকে জানা যায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজী বলেন, আমি তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দিয়েছি। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে সে ভাতা পাওয়ার কথা ছিলো। ছেলেটি কীভাবে মারা গেছে, পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করুক। তবে রাজনৈতিকভাবে যেনো কাউকে হয়রানি করা না হয়।
কাউছার হামিদকে আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার জানা মতে কাউছার সম্পূর্ণ নির্দোষ। তারপরেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ মৃত্যুর কারণ বের করুক।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন জানান, আমরা ঘটনার পরেই অভিযুক্ত কাউসার নামের এক যুবককে আটক করেছি। লাশ উদ্ধারের সময় নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। লাশের ময়না তদন্তের জন্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর বিষয়টি জানা যাবে। এ বিষয়ে নূরুর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে। নিহত নূরুর সাথে কাউসারের দ্বন্দ্বের বিষয়ে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু গোপন রাখতে হচ্ছে।

 

 

সর্বাধিক পঠিত