ফরিদগঞ্জে ইয়াবা দিয়ে যুবককে ফাঁসানোর চেষ্টা
আবদুর রহিম। বয়স বত্রিশের কোঠায়। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ডুমুরিয়া মোল্লা বাড়ির সফিউল্যা মোল্লার ছেলে। তার পানি নিষ্কাশনের একটি মেশিন রয়েছে। সেটি দিয়েই বিভিন্ন স্থানে লোকজনের বিভিন্ন পুকুর, ডোবা, নালার পানি নিষ্কাশন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই কাজ না থাকলেও অন্য কর্ম করেই তিনি দিনাতিপাত করেন। তাকেই থানার পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসার অভিযোগে রোববার রাতে তার বাড়ি থেকে আটক করেন। পুলিশের কাছে আসা তথ্য মতে তার বাড়ির বাথরুমের একটি কোণে ১০ পিস ইয়াবা লুকিয়ে রেখেছিল। পুলিশ সেই মতে সেই ইয়াবাগুলো উদ্ধার করে।
পরদিন সোমবার সকাল থেকেই এলাকা থেকে লোকজন আসা শুরু করে। এলাকার সর্বস্তরের লোকজন থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি সাজানো বলে জানায়। পরে পুলিশের কাছে বিষয়টি সাজানো বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে মুুুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। তবে তাকে নজরে রাখা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জানা গেছে, আবদুর রহিমের সাথে তার স্বজনদের জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। গত ৯ মে আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় উল্টো তাদের পক্ষে রায় দেয় বিজ্ঞ আদালত। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার জের বা পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, তাদেরকে উপজেলার ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের চান্দ্রা এলাকা থেকে জনৈক লোক প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দূরের স্থান তথা ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে আবদুর রহিমের কাছে ইয়াবা থাকার তথ্য দেয়। পুলিশের কাছে তাৎক্ষণিক খটকা লাগলেও মাদক উদ্ধারের স্বার্থে তারা রোববার রাতে বর্ণিত স্থান থেকেই ইয়াবা উদ্ধার ও আবদুর রহিমকে আটক করে।
থানার ওসি আবদুর রকিব ঘটনার বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান, রাতে রহিমকে আটক করে নিয়ে আসার পর তিনিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়, এটি একটি সাজানো গল্প ছাড়া কিছুই নয়। পরবর্তীতে আরো খোঁজ-খবর নিয়ে এবং এলাকা থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে তিনি বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হন।
তিনি আরো জানান, তিনি এই থানায় যোগদান করার পর থেকে এই পর্যন্ত ৫০টির বেশি মাদক মামলাসহ বিপুল সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। আটক হয়েছে চিহ্নিত অপরাধীরা। সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এই ঘটনাটি প্রথম থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। পরে তিনি পুলিশ সুপারের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মাদক আমাদের সমাজের বড় ব্যাধি। এর থেকে পুরো সমাজকে মুক্ত করতে আমরা সকল মহলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে চলেছি। কিন্তু ঘৃণ্য স্বার্থে একটি নিরাপরাধ ছেলেকে জড়িয়ে দিলে আমরা যেভাবে শান্তি পাবো না, তেমনি ওই পরিবারটিও পথে বসবে। তাছাড়া আমরা যুব সমাজকে মাদকের থাবা থেকে বেরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ঘটনাটির পিছনের কারণ জানা না গেলে হয়ত এই আবদুর রহিম বিনা অপরাধে মাদকের মামলায় জড়িয়ে পড়তো এবং এক সময় বাধ্য হয়ে এই জগতে প্রবেশ করতো।
আবদুর রহিমের বিষয় নিয়ে থানায় হাজির হওয়া বেশ ক’জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জমি সংক্রান্ত বা পারিবারিক বিরোধ যে কারোরই থাকতে পারে, কিন্তু এজন্য মাদকের মতো একটি মামলায় জড়িয়ে হীন স্বার্থ উদ্ধারের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। আমরা আবদুর রহিমসহ এলাকার অনেকের বিষয়ে জানি। রহিম এই কাজে জড়িত নয়, আমরা নিশ্চিত। তার আচার আচরণে আমরা অদ্যাবধি কোনো ত্রুটিই দেখতে পাইনি। ফলে একটি নিরাপরাধ লোককে রক্ষা করতে ছুটে এসেছি। থানা পুলিশও নিশ্চিত হয়েছেন এটি সাজানো নাটক। এ সময় তারা তথ্যদাতাসহ এর পিছনে থাকা লোকজনে শনাক্ত করার দাবি জানান।