• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শিলন্দীয়ায় নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে অন্যকে ফাঁসানোর চেষ্টা ॥ থানায় মামলা

প্রকাশ:  ২৩ মার্চ ২০১৯, ২০:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডস্থ শিলন্দীয়া গ্রামে নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে অন্যকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে নিজেই এলাকাবাসীর রোষানলে পড়েছেন। এমন গুঞ্জন এলাকায় মানুষের মুখে মুখে।
    জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত আঃ খালেক মিয়ার পুত্র মোঃ শাহআলম মিয়া এবং মৈশাদী ইউপি সদস্য হাকিম গাজী পরিবারের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে অনেক দিন থেকে। এরই মধ্যে গত ১৩ মার্চ শাহআলম মিয়া তার ঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগে এনে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৬।
    এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় যদি মোঃ শাহ আলম মিয়ার বাড়িতে আগুন লাগে, তাহলে আমরা এলাকাবাসী ছিলাম কোথায়। অথচ আমরা আগুন লাগার খবর কেউ জানি না। ওই গ্রামের আঃ রশিদ খন্দকার (৮৫) বলেন, একটা বসতঘরে আগুন লাগলে পাশর্^বর্তী কেউ কি জানবে না? আর মানুষের ঘরে আগুন লাগলে কি ডাক-চিৎকার হয় না? মনির মাল (৪০) বলেন, গত ক’দিন আগে বাবুরহাট বাজারে আগুন লাগলে বাজারের মানুষের ডাক-চিৎকার শুনে আমরা আগুন নিভাতে যাই। ওই গ্রামের মসজিদের মুসল্লিরা বলেন, শাহআলম ভাই ফজর নামাজ পড়তে এসে বলে, গতকাল রাতে আমার ঘরে আগুন লাগছে। আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে। আইজ আমি ঘরের মধ্যে মইরা গেলে আপনারা বলতেন বিদ্যুতের শর্টসার্কিটে আগুন লাগছে।
    মুসল্লি হুমায়ূন (৫৫) বলেন, শাহআলম মিয়ার বাড়িতে ফজর নামাজ শেষে আসি। তিনি আমাদের দেখালেন ঘরের বেড়ায় আগুন লাগানোর দৃশ্য। এতে দেখা যায় বেড়ার মধ্যে আগুনের কালো ধোঁয়ার চিহ্ন। সোহাগ ও জামাল বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এমন কাজ করেছেন শাহ আলম মিয়া। তিনি একজন মামলাবাজ প্রকৃতির লোক। শাহীন মালত বলেন, আমি আগে নেশা করতাম। এখন নেশা ছেড়ে দিছি। হাকিম মেম্বার আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়মিত কাজের একটা চাকুরি দিয়েছেন। রুহুল আমিন বলেন, যে মেম্বারের নামে মামলা দেয়া হয়েছে, তিনি এসব কাজ করতে পারেন না। তাকে গত বছর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করায় পুরস্কৃত করেছেন।
    মামলার বাদী মোঃ শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগম বলেন, আমাদের ঘরে হাকিম গাজী আগুন লাগিয়েছেন। আমার স্বামী তাকে দেখেছে। ‘সে আগুন লাগিয়েছে রাতে, কেনো ডাক-চিৎকার দেন না বা মানুষজনকে জানান না কেন’ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগে থেকেই তার সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহ আলম মিয়ার সাথে কথা বলতে একাধিকবার কল করেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
    মামলার বিবাদী মোঃ হাকিম গাজীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আমি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি এবং মানুষের সেবা করি। শাহ আলম মিয়া আমার নামে যে মামলা দিয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এ ঘটনার প্রকৃত সত্য পাওয়া যাবে। আমি ও সে একসাথে রাজনীতি করি। আমরা একই পরিবারের।            
    এ ব্যাপারে কথা হয় মৈশাদী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মানিকের সাথে। তিনি বলেন, মোঃ হাকিম গাজী আমার পরিষদের একজন মেম্বার। আর শাহ আলম মিয়া এ ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দুজনই আওয়ামী পরিবারের। বিষয়টি নিয়ে গতকাল মানববন্ধনও হয়েছে।
    চাঁদপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ঘটনার সততা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। এতে ইউপি সদস্য মোঃ হাকিম গাজীসহ অজ্ঞাত আসামীও রয়েছে।                        
    উল্লেখ্য, ১২ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার পৌর ১৪নং ওয়ার্ডস্থ শিলন্দিয়া গ্রামে মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়াজীর বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টার ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় মৈশাদী ইউপি সদস্য হাকিম গাজী ও তার ভাই মান্নান গাজী, দেলোয়ার গাজী, বিল্লাল গাজী ও সাইফুল ইসলামসহ ৫ জনকে দায়ী করে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে মোঃ হাকিম গাজীসহ ৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলাটি রুজু হয়।

 

সর্বাধিক পঠিত