শাহরাস্তিতে শত্রুতা উদ্ধারে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে পুলিশের সোর্সসহ ২ জন জেলে
ওসির ভূমিকায় রক্ষা পেলো নিরীহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
মোঃ জাকির হোসেন একজন নিরীহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যিনি জীবনে কখনো মাদক তো দূরের কথা সিগারেটও পান করেননি। সমাজে একজন সাধারণ সহজ-সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রীর প্রতি পাশর্^বর্তী এক লম্পট ব্যবসায়ীর কুনজর পড়ে। সেই থেকে নানাভাবে ওই মহিলাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে ওই লম্পট স’মিল ব্যবসায়ী নূর হোসেন। কিন্তু কোনোরকম পাত্তা না পাওয়ায় সে ওই নারীর স্বামীকে বিপদে ফেলতে নানা ফন্দি-ফিকির করতে থাকে। তারই অংশ হিসেবে মাদকের এক সোর্সকে কাজে লাগিয়ে সহজ-সরল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকিরকে ফাঁসানোর সব ব্যবস্থা করে ফেলে নূর হোসেন। কিন্তু শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ওসিদের মধ্যে খুবই বিচক্ষণ হিসেবে পরিচিত মোঃ শাহ আলমের সাহসী ভূমিকায় রক্ষা পায় নিরীহ জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী। এ ঘটনা ঘটেছে শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক গ্রামে।
শাহরাস্তি থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থানার এএসআই মোঃ হাবিবুর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক গ্রামের চৌকিদার বাড়ির জাকির হোসেনের বসতঘরে মাদক উদ্ধার অভিযান চালান। অভিযানকালে সোর্স মোঃ আবুল কাশেম জাকির হোসেনের রান্নাঘরের ডোলা থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১০ পিচ ইয়াবা বের করে দেয়। পরে পুলিশ জাকির হোসেনকে থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার সাধারণ লোকজন থানায় এসে জাকির হোসেন এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে না বলে জোর দিয়ে বলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলমের সন্দেহ হলে তিনি মাদকের সোর্স মোঃ আবুল কাশেমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে আবুল কাশেম সত্য ঘটনাটি বলে দেয়।
সোর্স আবুল কাশেম জানায়, গত ৫ বছর যাবৎ শোরসাক বাজারের ব্যবসায়ী নূর হোসেনের সাথে তার পরিচয়। তারপর থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নূর হোসেন তাকে উপজেলার ছিখুটিয়া ব্রিজের পাশে আসতে বলে। সন্ধ্যা ৬টায় আবুল কাশেম ছিখুটিয়া ব্রিজে এসে সেখানে দেলোয়ার হোসেন নামে আরেকজনকে দেখতে পায়। তখন নূর হোসেন তাদেরকে জানায়, জাকির হোসেনের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তাই প্রতিশোধ নিতে সে কিছু ইয়াবা দিয়ে জাকিরের স্ত্রীকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে চায়। এ কাজে তাকে ৮ হাজার টাকা দিবে বলে জানায় নূর হোসেন। তখন এ কাজে অপারগতা প্রকাশ করে দেলোয়ার হোসেন ওই স্থান ত্যাগ করেন। পরে তাকে (আবুল কাশেমকে) দিয়ে এ কাজটি করানো হয়। এজন্যে তাকে নগদ ৩ হাজার টাকা দিয়েছে বলে স্বীকার করে আবুল কাশেম। এসব কথা জানার পর পুলিশ নূর হোসেনকে আটক করতে তার বাড়িতে যায়। সেখানেই তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদকালে সে জানায়, তার সাথে জাকির হোসেনের স্ত্রীর সুসম্পর্ক ছিলো। বিগত ৩/৪ মাস যাবৎ জাকিরের স্ত্রী আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। তখন তার বিরুদ্ধে আমি অপপ্রচার চালালে সে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সে কারণেই তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করি।
জানা যায়, নূর হোসেন কিছু অশ্লীল ছবির সাথে জাকির হোসেনের স্ত্রীর ছবি সংযোজন করে এলাকায় প্রচার করে। বিষয়টি জানতে পেরে জাকির হোসেনের স্ত্রী শাহরাস্তি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর থেকেই নূর হোসেন জাকির হোসেনের স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।
গতকাল ২ ফেব্রুয়ারি সকালে পুলিশ জাকিরকে ছেড়ে দেয় এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে নূর হোসেন ও সোর্স আবুল কাশেম মোল্লাকে কোর্টে প্রেরণ করে। সেখান থেকে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধার হওয়ার পর ঘটনাটি আমার সন্দেহ হলে আমি বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্ত করি। এক পর্যায়ে নূর হোসেন ও আবুল কাশেম প্রকৃত ঘটনা স্বীকার করে। এতে করে একজন নিরপরাধ লোক রেহাই পেলো। তিনি বলেন, সমাজে যারা এ ধরনের অন্যায় কাজ করে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলতে চায়, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলমের বিচক্ষণতা এবং সাহসী ভূমিকায় একজন নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ায় শোরসাক গ্রামবাসী তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে। সমাজে যারা মাদক বিক্রি ও সেবনের সাথে জড়িত তাদের তাদের বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তেমনি করে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে বিপদে না পড়েন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছে সাধারণ জনগণ।