• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শাহরাস্তির নিখোঁজ কুয়েত প্রবাসী বাবুলের অপহরণের নতুন রহস্য উদ্ঘাটন

প্রকাশ:  ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 শাহরাস্তির নিখোঁজ কুয়েত প্রবাসী বাবুলের অপহরণের নতুন রহস্য জানা গেছে। উপজেলার আহমেদ নগর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী বাবুল নিখোঁজ প্রায় দেড় বছর যাবৎ। এদিকে বাবুলের ছেলে বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এতে বাবুলের ভাগিনা সুলাইমানকে প্রধান আসামী করায় সুলাইমান ২ মাস ২০ দিন কারাবরণ করেন। বর্তমানে সুলাইমান উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
    এদিকে সুলাইমানের মা ফিরোজা বেগম বাবুলের পরিবারের নিকট তিন লাখ টাকা পাওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ বাবুলের স্ত্রী জামিনে থাকলেও অপর এক আসামী বাবুলের ছেলের জামিন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। বাবুলের ছেলে জেলহাজতে থাকা অবস্থায় মামলার বাদী নিখোঁজ বাবুলের বোন ফিরোজা বেগম ও বাবুলের ভাগিনা কলিম উদ্দিন ৩ দিন পর চাঁদপুর কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উভয় পরিবারের আত্মীয়তার কারণে একটি আবেগময় পরিবেশ সেখানে তৈরি হয়।
    বাবুলের ছেলে শাহাদাত তার ফুফু ফিরোজা বেগম ও কলিম উদ্দিনের নিকট তার পিতার নিখোঁজের বর্ণনা দেন। বাবুল নিখোঁজ হওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ও ইন্ধনদাতা কুয়েত প্রবাসী হারুন। তিনি আরো বলেন, তার পিতাকে কিছু টাকার বিনিময়ে ওই দেশে আত্মগোপনে থাকার জন্যে হারুন নির্দেশ দেন। হারুন কুয়েত প্রবাসী বাবুলের পরিবারকে গোপনে সংসার পরিচালনার জন্যে হারুনের স্ত্রী শিউলীর মাধ্যমে বাবুলের পরিবারের জন্যে টাকা পাঠাতেন।
    বাবুল নিখোঁজ হওয়ার ৩ দিন পূর্বে আরবির কাছ থেকে বাবুল পাসর্পোট নিয়ে হারুনের কাছে দেয়। পাসপোর্ট হারুনের কাছে জমা দেয়ার কারণে বাবুল ওই দেশে প্রকাশ্যে আসতে পারেন না। হারুন দূতাবাস থেকে বাবুলের নিখোঁজের বিষয় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাসে বাবুল নিখোঁজ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন প্রদান করেন। এই বিষয়ে বাবুলের ছেলে শাহাদাত একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে সুলাইমানের দুই ভাই কুয়েত প্রবাসী মোঃ কুতুবউদ্দিন ও জুয়েলকে পুলিশ দ্বারা নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে কুয়েত পুলিশ বিভিন্ন নির্যাতনের পরেও নিখোঁজ বাবুলের কোনো তথ্য তাদের নিকট থেকে পায়নি।
    অন্যদিকে প্রবাসে হারুন, সাখাওয়াত গং বিভিন্নভাবে এই ঘটনা আপোষ করার জন্যে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে বলেন যে, কুতুব ও জুয়েলকে এ মামলা আপোষ না হলে যে কোনো কৌশলে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শাহাদাত আরো জানান, হারুন সাখাওয়াত তারা আমার পিতাকে শারীরিক নির্যাতন চালাতো। তারা বলতো, তোমাকে মেরে ফেললে তোমার মৃত্যুর জন্যে তোমার ভাগিনা সুলাইমানের ফাঁসি হবে। একদিন হঠাৎ করে আমার  বাবা (বাবুল) আমার মুঠোফোনে কল করে নির্যাতিত হওয়ার রহস্যের বর্ণনা দেন। এক পর্যায়ে সুলাইমান নির্দোষ বলে আমাকে  জানান।
    নিখোঁজ বাবুল কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। হারুন বাবুলের পাসপোর্ট নেয়ার কারণে ওই দেশে চিকিৎসা নিতে পারত না বাবুল। জেলগেটে আবেগাপ্লুত হয়ে শাহাদাত তার ফুফু ও ভাইয়ের নিকট এই নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
    সুলাইমানের ছোট ভাই কলিম উদ্দিন জানান, সত্য কখনো গোপন থাকে না। আমার মামা বাবুল নিখোঁজের মাধ্যমে আমাদের পরিবারের মাঝে একটা মহল দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। আমার মামাতো ভাই শাহাদাত আমার মায়ের দায়ের করা মামলায় ২৩ ডিসেম্বর জেলে যাওয়ার ৩ দিন পর আমরা তার সাথে সাক্ষাৎ করলে নতুন তথ্য সম্বলিত মূল ঘটনার রহস্য বর্ণনা দেন। কলিম আরো জানান, আমার বড় ভাই সুলাইমান চিকিৎসার জন্যে দেশে আসেন। তারা চক্রান্ত করে আমার ভাইকে মামলা দিয়ে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে রেখেছে। আমার দুই ভাই প্রবাসে থাকে। এ ঘটনায় তাদেরকে অনেক নির্যাতন চালানো হয়। আমরা আশা করি, স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এই বিষয়ে আমরা সামাজিকভাবে ও আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কলিম আরো জানান, জেলগেটে শাহাদাতের একটি ভিডিও রেকর্ড আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমরা ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এ বিষয়ে সরজমিনে নিখোঁজ কুয়েত প্রবাসী বাবুলের ছেলে এ প্রতিবেদককে জানান, জেলগেটে আমি আমার ফুফু ফিরোজা বেগম ও আমার ফুফাতো ভাই কলিমের নিকট ভয়ে এ কথাগুলো বলি।

 

সর্বাধিক পঠিত