• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

প্রতিবেশীর ঋণের দায় কাঁধে নিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

প্রকাশ:  ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

প্রতিবেশীকে বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তির টাকা উঠিয়ে দিয়ে পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সেই প্রতিবেশীর রান্না ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফাতেমা বেগম নামের ৩ সন্তানের জননী। গতকাল সোমবার বিকেলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামের খান বাড়িতে। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা ফাতেমার শোকে মুষড়ে পড়েছে। পুলিশ একইদিন বিকেলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে। ফাতেমা ওই বাড়ির দুলাল খানের স্ত্রী।
    স্থানীয়রা জানান, ফাতেমার পার্শ^বর্তী গাজী বাড়ির প্রবাসী ফজলুল হকের স্ত্রীর অনুরোধে বেশ কয়েক মাস আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা উঠিয়ে দেন ফজলুল হকের স্ত্রী জাহানারাকে। সময়মতো কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হবে এমন শর্তে ফাতেমা টাকাটা উঠিয়ে দিলে আরেকটা লোকের উপকার হবে এমন কারণে নিতান্ত গরিব ফাতেমা বেগম পর্যায়ক্রমে ৫টি এনজিও থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উঠিয়ে দেন জাহানারাকে। জাহানারা প্রথম কয়েকটি কিস্তি পরিশোধ করলেও কয়েক মাস পূর্বে হঠাৎ করে বসতঘরে তালা মেরে সন্তানদেরসহ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরপরেই সময় মতো কিস্তির টাকা পরিশোধে চাপ আসতে থাকে ফাতেমা বেগমের উপর। এ নিয়ে এলাকায় কয়েকটি সালিস বৈঠক বসলেও বেশ কিছু স্থানীয় দালাল কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্যে চাপ দিতেই থাকে। আর সেই কারণেই ফজলুল হকের রান্না ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাতেমা।
    ফাতেমার স্বামী দুলাল খান জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার ফজর নামাজ পড়ে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বের হন। মানুষের বাড়িতে কাজ-কর্ম করেন এবং প্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষ তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। এরপর ১০/১১টার দিকে ফিরে আসেন। কিন্তু আজ (সোমবার) দুপুর পার হলেও ফিরে আসেনি। যার ফলে আমি মেয়েদের নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে বের হই। এরপর আনুমানিক ৩টায় পাশের বাড়িতে (গাজী বাড়ি) খুঁজতে গেলে পাওনাদার প্রবাসী ফজলুল হকের রান্নাঘরের আড়ার সাথে আমার স্ত্রীকে ঝুলে থাকতে দেখি।
    তিনি আরো জানান, প্রবাসী ফজলুল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪৫) তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে চারটি এনজিও সংস্থা (আশা, ব্র্যাক, আপ ও ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস) থেকে পৃথকভাবে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঋণগ্রহণ করেন। ঋণের কয়েক কিস্তি পরিশোধ করার পর গত মাসে জাহানারা বেগম তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। তারপর থেকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রতিদিন কিস্তি অফিসের (এনজিও) স্যারেরা এসে আমার স্ত্রী ও আমাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। অন্যকে উপকার করতে গিয়ে আমার স্ত্রী জীবন দিছে (আত্মহত্যা করেছে)। ‘আমি স্ত্রীকে হারিয়ে এই সন্তানদেরকে নিয়ে কী করবো’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। এ সময় দুলালের কান্নায় খান বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
    স্থানীয় অলি আহমেদ (৪০) নামের একজন জানান, তার সাথে প্রতারণা করে এবং তাকে জামিনদার বানিয়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেছে ফজুলল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম।
    স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইয়েদ বেপারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি এবং থানায় অবহিত করি।
    চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাছান জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

 

সর্বাধিক পঠিত