অভিনয় করে টাকা হাতিয়ে নেন রামনাথ ঠাকুর!
আসল নাম মো. হারুন অর রশিদ। ছদ্মনাম রামনাথ থাকুর। বয়স ৫৬ বছর। প্রতারকচক্রের সদস্যরা তাঁকে রামনাথ থাকুর নামেই চেনেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার নবীগঞ্জের বাসিন্দা।
চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। জীবিকার প্রয়োজনে বছর দশেক আগে বিদেশে গিয়েছিলেন। অভিনয়টা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন তিনি। রাজধানীসহ সারা দেশে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার এমনকি সচিবকেও চাকরি ও ব্যবসার কথা বলে কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন তিনি।
শনিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে ধরা পড়েছেন এই রামনাথ ঠাকুরসহ আরো চারজন।
এই ব্যাপারে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আটক ব্যক্তিরা তাঁদের সহযোগীদের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও বয়স্ক লোকদের বিদেশি সংস্থা বা প্রকল্পে বেশি টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের সাজানো অফিসে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের পরিকল্পিত বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে লোকজনকে ফাঁদে ফেলেন। কোনো লিখিত নিয়োগপত্র না দিয়েই চাকরিতে নিয়োগ, পদবি ও বেতন নির্ধারণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁদের এক সহযোগীকে ভারতীয় বড় একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁদের পাতানো তাস খেলার মাধ্যমে বাজি ধরে কথিত ভারতীয়কে হারিয়ে লাখ লাখ টাকা জিতেছেন দেখান। ওই টাকা নিতে গেলে সমপরিমাণ টাকা উপস্থাপনের কথা বলেন এবং কথিত প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টে মূলধন হিসেবে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত অঙ্কের টাকা ভুক্তভোগীদের আনতে বলেন। টাকা নিয়ে অফিসে গেলে চক্রের সদস্যরা কৌশলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা রেখে তাঁকে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর সুযোগ বুঝে অফিসের আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আর এই চক্রের মূল চরিত্রে ভারতীয় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে অভিনয় করেন রামনাথ ঠাকুর।
গ্রেপ্তারের পরে এই চক্রের সদস্যদের আদালতে তুলে রিমান্ড চেয়েছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগরের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফরিদ। এসআই ফরিদ বলেন, আটক পাঁচজনের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আর একজনের একদিনের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত এবং অপর একজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
এসআই ফরিদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রামনাথ ঠাকুর বলেছেন, তিনি কয়েক বছর আগে দেশের বাইরে ছিলেন। একাধিক দেশের নাম বলেছেন তিনি। দেশে ফিরে সে এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি রামনাথ ঠাকুর নন, তাঁর আসল নাম মো. হারুন অর রশিদ।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চাকরি বা ব্যবসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এই ধরনের প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি চক্র ঢাকায় কাজ করে। আর রামনাথ ঠাকুর সব চক্রের সঙ্গেই জড়িত। তিনি মূলত ভারতীয় ব্যবসায়ীর চরিত্রে কাজ করতেন।
এসআই মো. ফরিদ আরো বলেন, গতকাল রামনাথ থাকুরের ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর আজ আরো চারজন ভিকটিম এসেছেন, যাঁরা এই রামনাথ থাকুরের চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এর আগেও একই ধরনের ১২টি অভিযোগ পাওয়া গেছে রামনাথ থাকুরের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রামনাথ থাকুর সব সময় কোট-টাই, চশমা এবং টুপি পরে থাকতেন। যে কোনো ভিকটিমের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সময় তিনি হিন্দিতে কথা বলতেন। যদিও তিনি বাঙালি। কৌশল হিসেবে তাঁর সঙ্গে সব সময় একটা ব্রিফকেস থাকত। যে ব্রিফকেস থেকে তিনি ডলার বের করে দেখাতেন। যাতে মনে হয় তিনি অনেক বড় ব্যবসায়ী এবং টাকার মালিক। তাঁদের চক্র কোনো ভিকটিমের কাছে থেকে যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিত তার ১০ থেকে ১২ শতাংশ পেতেন এই রামনাথ ঠাকুর।’