• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে গ্রাম আদালতে একমাসে আড়াইশ’ মামলা ॥ ১২ লাখ সাড়ে ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়

প্রকাশ:  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:২৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ কাজ ২০১৭ সাল হতে চলছে। তবে গ্রাম আদালতে মামলা গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাই মাস হতে। সেই থেকে গত মার্চ মাস পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩শ’ ২৬টি মামলা গ্রাম আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে ৩ হাজার ১শ’ ৫৯ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখানে মামলা নিষ্পত্তির হার শতকরা ৯৫ ভাগ। বর্তমানে ১৬৭টি মামলা জেলার প্রকল্পাধীন মোট ৪৪টি গ্রাম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ৩.৬০টি মামলা দায়ের হয়েছে যা মোটেও আশানুরূপ ছিলো না। এসব তথ্য ও মন্তব্য করেছে চাঁদপুর গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।
তবে কর্তৃপক্ষ জানায়, আনন্দের বিষয় হলো, চলতি বছরের মার্চ মাসে ৪৪টি ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে মোট ২শ’ ৫১ মামলা দায়ের হয়েছে। এ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ৫.৭০টি মামলা হয়। এ অগ্রগতির পেছনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তা দারুণভাবে কাজ করেছে। এক্ষেত্রে চাঁদপুর এবং দেশের বিভিন্ন মিডিয়া গ্রাম আদালতের প্রচার-প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জেলার প্রকল্পাধীন ৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের সকল চেয়ারম্যান, সচিব এবং গ্রাম আদালত সহকারীদের সাথে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি গ্রাম আদালত ফলপ্রদভাবে কার্যকর করার জন্যে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং বিদ্যমান নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কর্ম-কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। গ্রাম আদালত গতিশীল করার জন্যে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তাই ভিডিও কনফারেন্সের ফলাফল হিসেবে মার্চ মাসেই মামলার সংখ্যা বেড়ে যায়। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং এলাকার মানুষের ন্যায়-বিচার পাওয়ার সুযোগ অবারিত থাকবে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) যৌথভাবে চাঁদপুরসহ দেশের মোট ২৭ জেলায় ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের সঙ্গে মোট ৪টি জাতীয় পর্যায়ের এনজিও সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে ব্লাস্ট চাঁদপুরে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় ব্লাস্ট কাজ করছে।
গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তিকৃত মামলার বিপরীতে উল্লেখিত ২১ মাসে মোট ১,২৭,৫৬,১৭৭ (এক কোটি সাতাশ লক্ষ ছাপান্ন হাজার একশত সাতাত্তর) টাকা ও টাকার সম্পদ ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায় হয়েছে, যা মামলার আবেদনকারীদের মাঝে আদালতের নিয়ম মেনে রসিদ মূলে যথাসময়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রতি মাসে ৬,০৭,৪৩৭ টাকা আদায় হয়েছে। অথচ চলতি বছরের মার্চ মাসেই আদায় হয়েছে ১২ লাখ ৭২হাজার ৫শত টাকা, যা বিগত মাসের গড় আদায়ের দ্বিগুণেরও বেশী। মামলার ক্ষতিপূরণ পেয়ে বিচার-প্রার্থীগণ উপকৃত হয়েছেন এবং কেউ কেউ জীবনে নতুন আশা খুঁজে পেয়েছেন। গ্রাম আদালত অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায় হয়ে উঠেছে।
গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ (পঁচাত্তর হাজার) টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে। এ আদালতে ফৌজদারী মামলার ফি ১০ (দশ) টাকা ও দেওয়ানী মামলার ফি ২০ (বিশ) টাকা মাত্র। এর বাইরে এখানে আর কোনো খরচ নেই। এই আদালতে পক্ষগণ নিজের কথা নিজেই বলতে পারেন। এখানে কোনো আইনজীবীর দরকার হয় না। গ্রাম আদালতের বিচারিক প্যানেল মোট ৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হয়, যেখানে অন্ততপক্ষে একজন নারী সদস্য থাকেন। গ্রাম আদালত নারী-পুরুষ সবার জন্যে নিরাপদ ও ভয়মুক্ত। সাধারণ জনগণের বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে গ্রাম আদালত প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করছে। তাই এর প্রচার-প্রসারে সকলের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন মিডিয়া অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে।

 

 

সর্বাধিক পঠিত