প্রকাশ্য দিবালোকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ লুট
চাঁদপুর শহরের মিশন রোডের রামকৃষ্ণ আশ্রমের সম্মুখে দিনের আলোতে জনসম্মুখে দুর্বৃত্তরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৯ থেকে সোয়া ৯টার দিকে। জানা যায়, চাঁদপুর শহরের সাবেক কুমিল্লা রোড বর্তমান মরহুম আঃ করিম পাটোয়ারী সড়কের স্বর্ণমার্কেট নামক স্থানের গ্রামীণ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী স্বর্ণ ব্যবসায়ী নয়ন রায় প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও রামকৃষ্ণ আশ্রমের পাশে সামছুদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যানের বাগান বাড়ির বাসা থেকে বের হন।
প্রতিদিন তিনি ও তাঁর মেয়ে একই সাথে বের হন। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে যান। গতকালও তিনি পূর্বের ন্যায় বাসা থেকে বের হয়ে আশ্রমের গেইট বরাবর আসা মাত্র দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি তাকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে এবং তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী নয়ন রায় তার হাতে থাকা ব্যাগটিকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ব্যাগটিতে ছিলো বেশ কিছু টাকা এবং কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণ। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ব্যগটি এক পর্যায়ে হাত ছাড়া হয়ে যায়।
এদিকে বাবাকে এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য দেখে মেয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আশ্রমের ভেতরে ঢুকে তার বাবাকে বাঁচানোর আকুতি জানালে স্থানীয়রা এসে দেখেন, নয়ন রায় মাটিতে পড়ে আছেন। আর এক ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী নয়ন রায়কে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপরদিকে মুহূর্তেই এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আহত ব্যবসায়ীকে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্মরত চিকিৎসক তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
অপরদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নয়ন রায়কে দেখতে যান তার সহকর্মীসহ অন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ততক্ষণে ঘটনা জানতে পারে। ঘটনা জেনে তাৎক্ষণিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসিম উদ্দিন হাসপাতালে আহত নয়ন রায়কে দেখতে যান। সেখানে উপস্থিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা মিয়া (ফুল মিয়া) ও সাধারণ সম্পাদক মানিক পোদ্দার সহ সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা এ ঘটনা দেখে উদ্বিগ্ন, আমরা হতাশ। কারণ একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও আমাদের নিরাপত্তা নেই বলে ভাবছি। তারা উভয়ই বলেন, আহত নয়নের অবস্থা ভালো নয়, তাকে ডাক্তার ঢাকায় রেফার করেছেন। এই কারণে পরিবারের সদস্যরা তাঁর সাথে রয়েছে। আহত ব্যবসায়ী সুস্থ হয়ে আসলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা আরো জানান, আহত ব্যবসায়ী কথা বলতে পারেন না, তাই পুরো বিষয় এবং ঘটনার বিষয়ে পুরো জানা সম্ভব হয়নি। আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, যেনো অপরাধীদের দ্রুত বের করে আইনের আওতায় আনা হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসিম উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক আহত ব্যবসায়ীকে দেখতে হাসপাতালে যাই। এছাড়াও তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা শহরে থাকা সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেই ভিডিও ফুটেজে সব রয়েছে। অতএব এ বিষয়ে চিন্তার কারণ নেই। অপরাধীর অপরাধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ফুটেজে আছে। আমাদের একটি টীম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, ইনশাআল্লাহ অচিরেই ফলাফল পাবেন। এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
একটি সূত্রে জানা যায়, ২/৩ মাস পূর্বেও আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী নয়ন রায়কে অনুরূপভাবে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। ওই হামলায় তখন তিনি বেঁচে যান। অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ স্বর্ণ রাতে বাসায় নিয়ে যান। আবার সকালে নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, সব সময় তার কাছে নগদ ২-৪ লাখ টাকা থাকে। এ কারণে তিনি একটি ব্যাগ ব্যবহার করেন। ওই ব্যাগটি রাতে বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যান এবং সকালে দোকানে নিয়ে আসেন। মূলত এটি অনেকেরই জানা হয়ে যায়। যে কারণে জানা-শোনা লোকজন দ্বারা এমন ঘটনা হতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২/৩ জন ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন। তবে কত ভরি স্বর্ণ এবং নগদ অর্থ এ বিষয়ে পুরোপুরি জানা যায়নি।