মতলব দক্ষিণে এসিড পানে তিন শিশুর মৃত্যু
মতলব পৌরসভার পূর্ব কলাদী জামে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে গতকাল ৩০ আগস্ট জুমআর নামাজের পর ইমামপুত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান (৫), ইব্রাহিম খলিল (১২) ও রিফাত হোসেন (১৫) নামে তিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। লাশ ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ, ওসি (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিলসহ অন্য কর্মকর্তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে রিফাত হোসেন পূর্ব কলাদী জামে মসজিদে জুমআর নামাজের আজান দেয়। ওই মসজিদের ইমাম জামাল হোসেন তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ এক সাথে নামাজ আদায় করতে যান। ইমামের বয়ানের সময় তার শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল ও রিফাত হোসেন ইমামের কক্ষে প্রবেশ করে। নামাজ শেষে ইমাম নিজের রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় মুসল্লি শাহীন সরকার, সাইফুল, সুমন মোস্তফাসহ একাধিক ব্যক্তি দরজা ভেঙ্গে ইমাম ও মুসুল্লিদের উপস্থিতিতে কক্ষে প্রবেশ করেন এবং দেখেন ৩ শিশু-কিশোর অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এদের দু’জন ঘটনাস্থলে মারা যায়। একজনকে মতলব হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনজনের কেউই নামাজ আদায় করেনি।
ইমাম জামাল উদ্দিন জানান, জুমআর নামাজের আগে বেলা পৌনে ১টার সময় আমি বয়ান ও খুতবার জন্যে মিম্বারের দিকে যাই। নামাজ পড়ানো শেষে মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে নিজের রুমে ফিরে আসি। ওই সময় আমার রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকানো দেখে অনেক ধাক্কাধাক্কি করি। পরে মুসল্লিদের সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে দেখি, আমার ছেলেসহ অপর দুই শিশু-কিশোর অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দুই মাস পূর্বে মসজিদের ইমাম হিসেবে মাওলানা জামাল উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই থেকে তার শিশু সন্তানসহ আব্দুল্লাহ আল নোমান ওই কক্ষে বসবাস করতো। পরে এক মাস পূর্বে মসজিদ সংলগ্ন মুক্তা ভিলায় বাসা ভাড়া নেন। তাদের বাড়ি বরগুনা জেলার কালাই মুদাফাত গ্রামে। এর আগে তিনি চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া রোডের এক জামে মসজিদে ইমামতি করতেন। এদিকে মৃত ইব্রাহিম খলিল ও রিফাত মতলব পৌরসভার ভাঙ্গা পাড় মাদরাসার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। রিফাতের বাবা মতলব পৌরসভার নলুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন এবং ইব্রাহিম খলিলের বাড়ি উপজেলার নাটশাল গ্রামে ও তার পিতা জামাল উদ্দিন প্রধান।
মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম মাহাবুর রহমান বলেন, মৃত ঐ তিন শিশু কিশোরের মুখ থেকে শুধু ফেনা বের হচ্ছিল। ফুড পয়জনিং বা অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছি না।
মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ বলেন, ঘটনাস্থল ও কক্ষটি পর্যবেক্ষণ করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। এ মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম পিপিএম বলেন, এখনও কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফুড পয়জনিং বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হতে পারে। তদন্ত কার্যক্রম চলছে। পোস্টমর্টেমের পরে কারণ জানা যেতে পারে।