ঢাবির হলে থাকতে পারবেন বিবাহিত ছাত্রীরাও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ছাত্রীদের না থাকার নিয়মের বিধান বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রভোস্ট স্টান্ডিং কমিটি’র সভায় এ নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রক্টর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বিবাহিত, মাতৃত্বকালীন অবস্থায় (অন্তঃসত্ত্বা) হলে না থাকার নিয়মটি রহিত করেছে প্রশাসন। তবে সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে পরিবারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের থাকা সমীচীন বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের এখানেই থামলে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু নিয়ম পরিবর্তন করার জন্য কাজ করে যাবো। নারী-পুরুষের যে অসমতা, তা দূর করতে ঢাবি থেকে যাত্রা শুরু করা হবে।’
এর আগে বুধবার সকালে ঢাবির হলে বিবাহিত ও অন্তঃস্বত্ত্বা ছাত্রীদের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়েরে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত শিক্ষার্থীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ২৮ (১) ও (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। বিবাহিত ছাত্রীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং সংবিধানের ২৭ এবং ২৮নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ফলে আগামী তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আইনি প্রতিকার চেয়ে রিট আবেদন করা হবে।
নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, সামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট, কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রভোস্ট এবং সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টকে লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়।
এছাড়া আবাসিক হলে বিবাহিত মেয়েদের থাকার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একইসঙ্গে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে উচিত পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে এই নারী সংগঠনটি।