• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

প্রত্যাবাসন ও উত্থান ঠেকাতে মুহিবুল্লাহকে হত্যা

প্রকাশ:  ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

প্রত্যাবাসন ও নেতা হিসেবে উত্থান ঠেকাতে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। একটি দুর্বৃত্ত সংগঠনের শীর্ষ নেতার নির্দেশে হত্যা মিশনে অংশ নেন ১৯ জন। এদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন অস্ত্রধারী। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে কয়েক মিনিটেই কিলিং মিশন শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ তরে দুর্বৃত্তরা।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মুহিবুল্লাহর হত্যার কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেফতার ও হত্যার ছক সম্পর্কে জানার পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক।

এর আগে ভোরে মুহিবুল্লাহ হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হককে লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেন এপিবিএন-১৪ এর সদস্যরা।

আজিজুল হকের স্বীকারোক্তিতে তিনি ছাড়াও হত্যায় সহযোগিতা করা কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর ডি-৮ ব্লকের আব্দুল মাবুদের ছেলে মোহাম্মদ রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন ও একই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাস ও নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুলের স্বীকারোক্তির কথা জানিয়ে ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, মুহিবুল্লার হত্যার দুদিন আগে মরকাজ পাহাড়ে কিলিং মিশনের জন্য বৈঠক করে দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ১৯ জনকে মিশনে অংশ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে পাঁচজনকে সশস্ত্র অবস্থায় পাঠানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আজিজুল হক জানান, দিন দিন মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নেতা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। তার উত্থান ও প্রত্যাবাসন ঠেকাতে যেকোনো মূল্যে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা মতো ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহকে বাসা থেকে অফিসে ডাকা হয়। প্রত্যাবাসন বিষয়ে কয়েকজন কথা বলতে ডাকছে বলে বাসা থেকে বের করে আনে গ্রেফতার মুরশিদ। এরপর বাকিদের সংকেত দিয়ে সে অফিস থেকে চলে যায়।

নাইমুল হক আরও বলেন, সশস্ত্র টিম অফিসে ঢুকে একজন মুহিবুল্লাহকে বলে ‘ওঠ’ তোর সঙ্গে কথা আছে। বসা থেকে উঠতেই প্রথমজনের একটি, তার পরেরজনের দুটিসহ মোট চারটি গুলি করা হয় মুহিবুল্লাহকে। এরপর মুহিবুল্লার বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় স্কোয়াডের পাঁচজন। পরে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। বিভিন্নজনের ওপর দোষ চাপাতে থাকে।

হত্যায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে এবং যেকোনো সময় তারা গ্রেফতার হতে পারে বলে জানান এপিবিএনের এ কর্মকর্তা।

২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় আগে পাঁচজন সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ইলিয়াস নামের একজন রোহিঙ্গা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার চারজনসহ এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ জনকে হত্যা, আটক ১০
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদরাসায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয়জন নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত দশজনকে আটক করেছে এপিবিএন সদস্যরা।

শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকালে সশস্ত্র অবস্থায় একজনকে আটকের পর শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালিয়ে আরও নয়জনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান। আটকদের মধ্যে তিনজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

তবে, তদন্ত ও অভিযানের স্বার্থে এখনই আটকদের নামপরিচয় জানানো সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতি শিগগিরই বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। কিন্তু এ হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। ঘটনার পরপরই মুজিবুর রহমান নামে একজন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়।

২২ অক্টোবর ভোর সোয়া ৪টার দিকে ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদরাসায় মুখোশ পরা একদল দুর্বৃত্ত এসে এলাপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এরপর গুলিবিদ্ধদের কুপিয়ে এবং গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত বেশ কয়েকজনের হাতের আঙুলসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।