এক মাদরাসায় দু’জন ভারপ্রাপ্ত সুপার!
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার একটি মাদরাসায় দু’জন শিক্ষক নিজেদের ভারপ্রাপ্ত সুপার দাবি করায় শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার।
রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা হেম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার খাইরুল ইসলাম ও শিক্ষক আবু বক্কার সিদ্দিক দু’জনই নিজেদের ভারপ্রাপ্ত সুপার দাবি করে শিক্ষা অফিসে এডহক কমিটি অনুমোদনের চিঠি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাইরুল ইসলাম ২০১৮ সালে ওই মাদরাসায় সহকারী সুপার পদে যোগদান করেন। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ওই মাদরাসার সুপার আব্দুল হাই আল হাদী অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় পদটি শূন্য হয়। বিধি মোতাবেক সহকারী সুপার খাইয়রুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সুপার নিয়োগ দেয় ম্যানেজিং কমিটি। এ অবস্থায় গত ৬ মে সুপার পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। খাইরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সুপার থেকে ২০ মে পদত্যাগ করে সুপার পদের জন্য আবেদন করেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদটিও শূন্য হয় এবং ২২ মে মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সভায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিনিয়র শিক্ষক আবু বক্কার সিদ্দিককে ভারপ্রাপ্ত সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়।
নতুন ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু বক্কার সিদ্দিক সুপার পদের প্রার্থীদের আবেদন উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সভাপতি এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে আবেদন যাচাই বাছাই করেন। এরপর করোনাসহ বিভিন্ন কারণে সুপার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকে। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষেও এডহক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
পরে অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই খাইরুল ইসলাম মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সুপার দেখিয়ে এডহক কমিটি অনুমোদনের তারিখ গ্রহণ করেন এবং অভিভাবক সদস্যও নেন। শুধু তাই নয়, জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষক প্রতিনিধির জন্যও আবেদন করেন। অপরদিকে আবু বক্কার সিদ্দিকও নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সুপার উল্লেখ করে শিক্ষা অফিসে কাগজপত্র জমা দেন। এ সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি ধরে ফেলেন যে এক প্রতিষ্ঠানে দু’জন ভারপ্রাপ্ত সুপার হন কীভাবে। জরুরি ভিত্তিতে ঘটনা তদন্তে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে দু’জন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ওই মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সাবেক সুপার আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, আমি চলে আসার পর সহকারী সুপার খাইরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সুপার নিয়োগ হন। এরপর তিনি পদত্যাগ করেন। এ কারণে ম্যানেজিং কমিটি সিনিয়র আবু বক্কার সিদ্দিককে দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত সুপার পদটি ফিরে পেতে খাইরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে মো. আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, সহকারী সুপার তার নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং মাদরাসার সব কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।
ভারপ্রাপ্ত সুপার দাবি করা সহকারী সুপার খাইরুল ইসলাম বলেন, আমাকে জোর করে ভারপ্রাপ্ত সুপার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমি উচ্চ আদালতে পদ ফিরে পেতে মামলা দায়ের করেছি।
রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্তে উভয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ জানান, একটি প্রতিষ্ঠানে দু’জন ভারপ্রাপ্ত সুপার থাকতে পারেন না। তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।