লাকসাম জগন্নাথ বাড়িতে ৩৬ প্রহর হরিনাম কীর্তন এলজিআরডি মন্ত্রীর অভিনন্দন
পুণ্যশ্লোকা স্বর্গীয় যশোদা চৌধুরাণী প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা জেলার লাকসাম শ্রীশ্রী জগন্নাথ বাড়িতে বার্ষিক মহোৎসব উপলক্ষে বিশ্বশান্তি দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় ৩৬ প্রহরব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কুমিল্লা ৯ আসনের সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম শুভেচ্ছা অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। উৎসব উপলক্ষে চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, কুমিল্লা, সোনাইমুড়ি, চৌমুহানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার ভক্ত পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে উৎসবস্থলে সমবেত হয় এবং হরিনাম কীর্তন শ্রবণপূর্বক উৎসব চলাকালীন প্রতিদিন জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। তাদের সমবেত উপস্থিতিতে উৎসবস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে। গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ ও ধর্মীয় আলোচনা সভাশেষে গঙা আবাহন ও অধিবাস কীর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৫ দিনব্যপী ৩৬ প্রহর মহাহরিনাম কীর্তন। অনুষ্ঠানে হরিনাম কীর্তন পরিবেশন করেন খুলনার কৃষ্ণ ভক্ত সম্প্রদায়, বাগেরহাটের ভক্ত নরোত্তম সম্প্রদায়, ফরিদপুরের জয়গুরু সনাতন সম্প্রদায়, ঢাকার শচীনন্দন সম্প্রদায়, সাতক্ষীরার বাবা লোকনাথ সম্প্রদায় ও মাদারীপুরের সুধারাম সম্প্রদায়। গত ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে পূজা ও ভোগারতি শেষে শুরু হয় মহোৎসবের মহাপ্রসাদ বিতরণ। হাজার হাজার ভক্ত নর-নারী অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। এদিন সন্ধ্যায় শুরু হয় উৎসবস্থলে মিলনকীর্তন। মিলনকীর্তন চলাকালে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় যশোদা চৌধুরাণীর বংশধর দৌহিত্র শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত কমিটির প্রধান ও উৎসব কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডঃ রঞ্জিত রায় চৌধুরী।
তিনি আগত ভক্তবৃন্দকে বৈষ্ণবীয় প্রণাম জানিয়ে বলেন, আমার বংশধরগণ এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেও এ মন্দির আপনাদের সকলের, এ উৎসব সার্বজনীন। মন্দির বা উৎসবে যদি ভক্তের উপস্থিতি না হয় তাহলে ঠাকুরের কৃপা লাভ করা যায় না, যেখানে ভক্ত সমাবেশ সেখানেই শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব বিরাজমান। তাই আপনাদের ভক্তবৃন্দের কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে জগন্নাথদেবের সকল অনুষ্ঠানে আপনারা উপস্থিত থেকে তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এলাকার পৌর কাউন্সিলর আফতাব উল্লাহ চৌধুরী।
এ সময় মন্দির পরিচালনা সেবাইত কমিটির পার্থ রায় চৌধুরী, চন্দন রায় চৌধুরী রিংকু, রিপন রায় চৌধুরী, শিপন রায় চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, লাকসাম উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় সাহা, যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর কুমার দাস টেবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু সাহাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উৎসব চলাকালীন লাকসাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ মোঃ ইউনুছ ভূঁইয়া, লাকসাম পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, পৌর কাউন্সিলর মোঃ আফতাব উল্লাহ চৌধুরীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ উৎসবস্থলে আসেন এবং সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন। উৎসব উপলক্ষে মন্দির সংলগ্নস্থানে সপ্তাহব্যাপী বিশাল মেলা বসে। কথিত আছে জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা যশোদা চৌধুরাণী পুরীর জগন্নাথধাম দর্শনের আকাক্সক্ষা নিয়ে পুরীধামের পথে যাত্রা করলে জগন্নাথদেব তাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাকে বলা হয় তুমি তোমার বাড়িতেই আমাকে প্রতিষ্ঠা করো। কিন্তু যশোদা দেবী তা না শুনে পুনরায় যাত্রা করলে তাকে আবারো স্বপ্নে বলা হয়, আমার কথা না শুনলে তোমার অনিষ্ঠ হবে। সকল ভক্তই যদি আমার দর্শন লাভে পূরী যায়, তাহলে যে সকল ভক্তের পুরী যাবার সামর্থ নেই আমার সেই সকল ভক্তের কী হবে। জগন্নাথদেব কর্তৃক এ আদেশ পেয়ে তখন যশোদা দেবী এ স্থানেই শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের মন্দির স্থাপন করেন এবং মন্দির পরিচালনায় মন্দির সংলগ্ন স্থানে প্রায় ১০ একর সম্পত্তি দান করেন। এখন সেই দানকৃত স্থানের উপরই গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ খেলার মাঠসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও মন্দির কমিটির দ্বারা বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই ভক্তবৃন্দের কাছে লাকসাম জগন্নাথ মন্দিরের তাৎপর্য অনেক বেশি।