• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাচি-ভাতিজার প্রেম নাটকের অবসান

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৫১
পাবনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট

জন্মদাতা বাবার চেয়েও আপন হয়েছে প্রেমিক। চোখের সামনেই নিজের বাবাকে হত্যা করার পরও ভাতিজা (ঘাতক প্রেমিক) সবুজের হাত ধরে পালিয়ে যায় প্রেমিক মনা অসীম ভালোবাসার অধিকারিনী প্রবাসী শাহজাহানের স্ত্রী মারিয়া খাতুন (২৫)। বাবা হত্যার চেয়েও মারিয়ার মাথা ব্যথা সবুজকে নিয়ে। সবুজের কিছু হলে বাচবে না সে। মারিয়া বলে, সবুজ আমার জীবন। সবুজকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। সবুজ জেলে গেলে আমি আত্মহত্যা করবো। বাবাকে হত্যা করে এ কেমন ভালোবাসা! চারিদিকে মানুষের ধিক্কার।

জানা গেছে, সবুজ মারিয়ার সামনেই তার বাবাকে খুন করে এবং বাধা দিতে আসা অপর এক চাচাকে গুরুতর আহত করে ভালোবাসার ঘর বাঁধতে অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় তারা। কিন্ত পুলিশের তৎপরতা তাদেরকে বেশি দিন ভালোবাসার বাসায় খাকতে দেয়নি। রোববার ভোরে সাতক্ষীরা জেলার একটি নির্ভিত পল্লী গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হওয়া সবুজ ও তার চাচি মারিয়ার স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, অপহরণ নয়, প্রেমের কারণেই খুন হতে হয়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের রিক্সা চালক মোয়াজ্জেম হোসেনকে (৪৫)। রোববার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ের আয়োজন করা হয় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে।

সেখানে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, বেড়া উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে মোজ্জেমের মেয়ে মারিয়া খাতুন (২৫) এর সাথে তারই আরেক ভাইয়ের ছেলে সবুজ শেখের দীর্ঘদিনের প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সবুজের সাথে এ সর্ম্পক মেনে নেয়নি মারিয়ার বাবা। কয়েক বছর আগে মারিয়ার সাথে সবুজের চাচা শাহজাহান আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরও সবুজ ও মারিয়ার গোপন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এর মাঝে বিষয়টি জানাজানি হলে মারিয়ার প্রবাসী স্বামী শাহজাহান এলাকায় এসে শালিস বৈঠক ও স্ত্রী মারিয়াকে বেধরক মারপিটও করে। কিন্তু সবুজ মারিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গভীর থেকে আরও গভীর হয়ে পড়ে। পুলিশ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে দাবী করছে, দীর্ঘদিনের এ সম্পর্ক এলাকা ব্যাপক গুঞ্জন, নানা মুখররোচক গল্প রয়েছে।

বেড়া সার্কেলের এএসপি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাসান বলেন, গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সবুজ ও মারিয়া বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে মারিয়ার বাবা এতে বাধা দেন। এ নিয়ে সবুজ ও মারিয়ার বাবার মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এরই এক পর্যায়ে ঘর থেকে ধারালো ছুরি এনে সবুজ মারিয়ার বাবাকে এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় মারিয়ার চাচি হাসনা খাতুন বাধা দিতে গেলে তাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে। এরপর মারিয়াকে নিয়ে সবুজ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় ওই দিনই হত্যা ও অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিহত মোয়াজ্জেম শেখের ভাই জাহাঙ্গীর শেখ।

এএসপি আশিস বিন হাসান বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় আসামী সবুজ, রহিম, ইব্রাহীম, ইমরান, আমুদ, আসান ও কোমরকে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, মামলাটি পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম এর তত্বাবধানে ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এলআইসি শাখার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযান চালানো হয় পাবনার বেড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। এরপর ৭ ও ৮ অক্টোবর সাতক্ষীরায় সাড়াশী অভিযান চালিয়ে ওই জেলার তালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ধুলন্ধা থেকে মারিয়াকে উদ্ধার ও সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির করা হয় মারিয়া খাতুন ও সবুজ শেখকে। এ সময় পুলিশের কাছে তারা ঘটনার দিন থেকে আগে এবং পরের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।

সাংবাদিকদের জবাবে মারিয়া খাতুন বলেন, বাবা মারা গেছে জানতাম না। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার পর জেনেছি বাবা মারা গেছে। তার দাবী, সবুজকে যদি জেলে পাঠানো হয় তাহলে আমি মরে যাবো। সবুজকে আমি না পেলে আত্মহত্যা করবো। আর সবুজ শেখ সাংবাদিকদের জানায়, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু মারিয়ার বাবা এই সর্ম্পক মেনে নিতে পারেনি। টাকার লোভে শাহজাহান আলীর সাথে চতুর্থ নম্বর বউ হিসেবে বিয়ে দিয়েছে। সবুজ জানায়, শাহজাহান আলীর প্রথম স্ত্রী মারা গেছে। আরও দুই স্ত্রী থাকা সত্বেও মারিয়াকে তার বাবা টাকার লোভে চতুর্থ বউ হিসেবে বিয়ে দিয়েছেন।

মারিয়ার বাবাকে হত্যার বিষয়ে সবুজ পুলিশকে জানায়, মারিয়ার বাবাই তাকে প্রথমে বটি দিয়ে কয়েকটি কোপ মারে। কিন্তু বটি ধারালো না হওয়ায় তার তেমন আঘাত লাগেনি। পরে ক্ষিপ্ত হয়েই মারিয়ার বাবাকে সবুজ ধারালো ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ সুপার বলছেন, মারিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা ও অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে যে তথ্য বের হয়ে এসেছে তাতে বাবা হত্যা মামলার আসামী হতে হবে মারিয়াকেও। তিনি বলেন, মারিয়া ও সবুজকে  উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে সোর্পদ এবং রিমান্ডে নেয়া হতে পারে।

সর্বাধিক পঠিত